তেলে সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না কেউ

28

ফারুক আবদুল্লাহ

এখনো ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি চলছে। ভ্যাট প্রত্যাহারেও মিলছে না সুফল। কেউ মানছে না সরকারের বেঁধে দেওয়া দর। ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার থেকে রীতিমতো খোলা ভোজ্যতেল উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন ও খোলা সয়াবিন তেল সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেলের বাজারে সংকট সৃষ্টি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি চলছে। এজন্য তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের কারসাজি বন্ধে দ্রæত সরকারকে তদারকি জোরদার করতে হবে।
চাক্তাইয়ের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী এবং ইসহাক ব্রাদার্সের কর্ণধার মো. খোরশেদ জানান, গত ২৮ মার্চ সরবরাহ আদেশ (এসও) নিয়েছি, এখনো পর্যন্ত ডেলিভারি দেওয়া হয়নি। ডেলিভারি জন্য গাড়ি সিরিয়ালে আছে। রমজান উপলক্ষ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়েছে। তবে সঠিক সময় মাল হাতে না পাওয়ায় গ্রামগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সরবরাহ দিতে পারছি না।
একইভাবে মাওলানা ব্রাদার্সের কর্ণধার মো. শওকত আলী জানান, কোম্পানির ফার্স্ট পার্টি থেকে মাল না দেওয়ায় সকাল থেকে তেল বিক্রি করতে পারিনি। আমাদের মতো এখানকার প্রত্যেক দোকানে সংকট চলছে। আর সরকার নির্ধারিত দামের বোতলজাত তেল এখনো বাজারে আসেনি। তাই বোতলজাত তেলের সংকট রয়েছে।
তাদের মতো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেশিরভাগ দোকানে খোলা সয়াবিন, সুপার ও পাম তেল রীতিমতো উধাও হয়ে গেছে। সরেজমিনে বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।আর বোতালজাত সয়াবিন ও খোলা ভোজ্যতেল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া গত ৬ দিনে খোলা সয়াবিনের দামও বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৮ মার্চ মণপ্রতি পাম তেলের সরবরাহ আদেশ (এসও) ছিল ৫ হাজার ২৫০ টাকা, যা বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ৬ দিনে মণপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়েছে।
একইভাবে গত ৬ দিন আগে মণপ্রতি খোলা সয়াবিনের এসও ছিল ৫ হাজার ৭০০ টাকা, যা বর্তমানে ৬ হাজার ২০০ টাকা। এতে মণপ্রতি বেড়েছে ৫০০ টাকা। এছাড়া ৫ হাজার ৪০০ টাকা মণপ্রতি সুপার তেলের এসও বর্তমানে ৬ হাজার টাকা।
দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ১২ লাখ টন। এর মধ্যে ৮ লাখ টন সয়াবিন, সাড়ে তিন লাখ টন সরিষা ও অন্যান্য তেল ৫০ হাজার টন। আর পাম তেলের চাহিদা ১৩ লাখ টনের মতো। বলতে গেলে চাহিদার ৭৫ শতাংশই আমদানি নির্ভর।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, চলতি মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তিনটি জাহাজে অপরিশোধিত প্রায় ৭৫ হাজার টন সয়াবিন তেল এসেছে। অপরিশোধিত পাম তেলও আমদানি হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার টন। তেলের আরও দুটি জাহাজ আসার পথে রয়েছে। আর ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসেই চার লাখ টনের বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালে আমদানি হয়েছিল অপরিশোধিত ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন তেল।
এদিকে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার, যা ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সেই সঙ্গে সরকার রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছয় টাকা কমিয়ে নতুন দামও নির্ধারণ করে। সেই অনুয়ায়ী এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৬০ টাকা এবং প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা দামে বিক্রি করা জন্য বলা হয়। কিন্তু রমজানের আগের দিনেই বাজারের চিত্র উল্টো। রীতিমতো বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে গেছে। এতে সংকট সৃষ্টিসহ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।