তৃণমূলে কি বার্তা পেল কি বার্তা দিল বিএনপি

18

এম এ হোসাইন

গত একমাসে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি থানাভিত্তিক কর্মী সভার আয়োজন করে ১৫ থানার মধ্যে ১৩টি থানায় সম্পন্ন করেছে। সময় পেছানোর কারণে পাহাড়তলী ও হালিশহর থানার কর্মী সভা করা বাকী আছে। আগামি সপ্তাহের মধ্যে এ দুই থানার কর্মীসভাও শেষ হবে। ধারাবাহিকভাবে হওয়া কর্মীসভাগুলো ছিল রুদ্ধদ্বার এবং দীর্ঘসময় ধরে। এসব বিএনপি কি বার্তা দিয়েছে? আর কর্মীদের কাছ থেকেই বা কী পেয়েছে সেটা নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
‘মূলত কর্মীসভাগুলো ছিলো বিএনপির কর্মীদের পালস্ বুঝার কৌশল। কর্মীরা কি চায়, সামনের রাজনীতির ধরণ কেমন হওয়া উচিত, নেতৃত্ব কেমন হওয়া উচিত, ভোটের আগ্রহ কেমন, আন্দোলনের পথ কেমন হওয়া দরকার সর্বোপরি কর্মীদের স্বতন্ত্র মতামতের একটি সারসংক্ষেপ জানার প্রচেষ্টা বলা চলে এই কর্মীসভাকে’- নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মীসভায় যোগ দেয়া বিএনপির এক নেতা এমনটাই মনে করেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া থানাভিত্তিক কর্মীসভা ৯ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নেতাদের ব্যস্ততার কারণে হালিশহর আর পাহাড়তলী থানা কমিটির কর্মীসভার দিনক্ষণ পরিবর্তন করা হয়। আগামিকাল বৃহস্পতিবার পাহাড়তলী এবং আগামি সপ্তাহে হালিশহর থানার কর্মীসভার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে।
জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ থানা কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে আহব্বায়ক কমিটি গঠন এবং পরবর্তীতে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কর্মীসভা শুরু করেছিল বিএনপি। কেন্দ্রীয় বিএনপির পেশাজীবীদের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক এবং ভোটের রাজনীতি নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশের কারণে থানা কমিটির কর্মীসভায়ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আশা করেছিল কর্মীরা। তবে কোনো নির্দেশনা না দিয়ে শুধু কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়েছেন নেতারা। কর্মীদের কাছ থেকে নানা মতামত নিলেও কর্মীদের দিলেন শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ।
কর্মীসভায় কমিটি সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়া কিছু ছিলো না জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কর্মীদের পাল্স অনুযায়ী কমিটি করা হবে। তারা যেভাবে চাচ্ছে সেভাবে হবে। কর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সব করবো। যারা মামলা-হামলার শিকার, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যারা তৃণমূলকে সংগঠিত করতে পারবে, যাদের তৃণমূলে সাপোর্ট আছে এমন লোককে আমরা তুলে আনতে চাই।
একাধিক নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কর্মীসভাগুলোতে হামলা-মামলার শিকার ও ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন, পকেট কমিটি বিলুপ্ত করা, গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের আন্দোলন জোরদার করা, ভোটের মাঠে অবস্থান জোরালো করার প্রসঙ্গ এসেছে বারে বারে। তাছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন জোরদারের বিষয়গুলো আসে। এছাড়াও বিভিন্ন থানায় একাধিক নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু অভিযোগ তোলা হয়। কর্মীদের নানা বিষয়ে বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে কর্মীসভায় উপস্থিত নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই আগামির কমিটি নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন নেতারা।
কোনো কোনো কর্মীসভায় কর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। বাধ্য হয়ে নেতারা শুধুমাত্র কমিটি সংক্রান্ত আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন বলেও জানা যায়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ওয়ার্ড লেভেলে যাওয়ার একমাত্র কারণ হলো সঠিক নেতৃত্ব যেন বেছে নিতে পারি। সংগঠনের জন্য সক্রিয়, ত্যাগী, সংকটের সময়ে দাঁড়াতে পারবে- এমন নেতাকে যেন খুঁজে আনতে পারি। সঠিক নেতৃত্ব যেন তুলে আনতে পারি। আমাদের কর্মীদের চাওয়াও একই, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। দলের একটা দুঃসময় সেটা কাটিয়ে ওঠা, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া- এসব বিষয় নিয়ে কর্মীরা নানা মতামত দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আওয়াজ ছিল কর্মীদের মধ্যে।
মূলত আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ধারাবাহিক বৈঠকের আয়োজন করে। প্রথম দফায় ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ও দ্বিতীয় দফায় ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিন করে ছয় দিন বৈঠক হয়। এতে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমÐলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক জেলা, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিজেদের মতামত জানান বৈঠকগুলোতে। এর পরপরই ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে, পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সর্বশেষ ৮ ও ৯ অক্টোবর ৪৮টি পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ধারাবাহিক বৈঠক চলা অবস্থায় চট্টগ্রামে শুরু হয় থানাভিত্তিক কর্মীসভা। যার কারণে এ কর্মীসভার প্রতি আলাদা দৃষ্টি ছিল সবার।