তুলার গুদামে আগুন ৩১ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

15

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মোট ১৭ ইউনিটের সম্মিলিত চেষ্টায় প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর সীতাকুন্ডের কুমিরা নেমসন কন্টেইনার ডিপো সংলগ্ন ইউনিটেক্স গ্রুপের তুলার গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে তুলা হওয়ায় এখনও গুদামে নিভু নিভু করেও আগুন জ্বলার কারণে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, আমরা রবিবার বিকাল ৪ টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেই। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও তুলা হওয়ায় এখনো মৃদু আগুনের ধোঁয়া উঠছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রেখেছি। গত শনিবার আগুন লাগার পর থেকে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। তুলার গুদাম হওয়ায় আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে। এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি সংকট ছিল। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। পরে আশপাশের পুকুর ও আধা কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রের কাজ করি।
আগনি লাগার কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, এ মুহুর্তে কোন কথা বলা সম্ভব না। কারণ আমাদের মূল কাজ ছিল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা। এখন তদন্ত হবে, তদন্ত পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি, উদ্ধার ও কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
রাসেল নামে স্থানীয় এক যুবক ক্ষোভ প্রকাশ কর বলেন, বড় বড় শিল্প মালিকরা প্রতিষ্ঠান করছেন ও করবেন। আমাদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কিন্তু এত বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান করলেও তারা কোন পানির ব্যবস্থা করেননি। আগুন লাগলে সকলের হুশ হয়। আগুন লেগেছে তুলার গুদামে, আর আমাদের এলাকায় সব পুকুরের পানি শেষ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এখন মানুষের অনেক কষ্ট হবে। কারণ গ্রামে এখনও সব ঘরে মোটরের পানি নেই। তার মধ্যে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পাহাড় থেকে আসা পানি বাঁধ দিয়ে রেখেছে। পানিশূন্য হয়ে পড়েছে ছড়া ও খাল।
জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টায় সীতাকুন্ডের কুমিরা ইউনিয়নের হিঙ্গরি পাড়ায় নেমসন ডিপো সংলগ্ন এসএল স্টিলের মালিকানাধীন ইউনিটেক্স গ্রুপের তুলার গুদামে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথম দিকে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে সীতাকুন্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের টিম অংশ নেয়। এরপর আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। শনিবার সন্ধ্যার পর তুলার গুদামের ভেতরে জ্বলা আগুন আরও বেড়ে যায়। রাতে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের এসব ইউনিটের পাশাপাশি আগুন নেভাতে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ৮টি ইউনিট। পাশাপাশি বিজিবির চারটি ফায়ার ফাইটার ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষ উদ্ধারকারী টিম ইউএসএআর ঘটনাস্থলে এসে কাজ শুরু করে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট তুলার কাজ করে। রবিবার বিকাল ৪ টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি দীর্ঘ সময় ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করেন।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউনিটেক্স গ্রুপের পরিচালক (লিগ্যাল এন্ড এস্টেট) সৈয়দ ফারহান আহমেদ বলেন, এ মহুর্তে কোন কথা বলা আমার উচিৎ না, কারণ আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা তদন্ত করছেন। কী কারণে এবং কীভাবে এ দুর্ঘটনা এবং আগুনের সূত্রপাত, সব তদন্ত পরবর্তী জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, আগুনে আমাদের প্রায় একশ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) আশরাফুল আলন বলেন, রাতভর ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা। রবিবার সকালে অনেকটা আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে বিকাল নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আগুনের বিষয়ে ডিসি স্যার তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে।