তুরস্কের ভ‚মিকম্পে নিহত ৫ হাজার ছাড়াল তুরস্কে যাচ্ছে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল

12

পূর্বদেশ ডেস্ক
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে ৩ হাজার ৫৪৯ এবং সিরিয়ায় ১ হাজার ৬০২ জন। এখন বড় চ্যালেঞ্জ তীব্র ঠাÐা, তুষারপাত ও বৃষ্টির মধ্যে সময়মতো উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়া। কারণ, ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আটকা অসংখ্য মানুষ বাঁচার জন্য মরিয়া। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে নতুন আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি। দেশটির এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১০টি শহরে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর মৃত মানুষের সংখ্যা আট গুণ বাড়তে পারে।
এদিকে ব্যাপক বিপর্যয়ে ত্রাণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন; ভ‚মিকম্প কবলিত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ এলাকায় গতকাল এমন হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি শহর আন্তাকিয়ায় ১০ তলা একটি ভবন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জরুরি কর্মীদের একটি উদ্ধার কাজ চালাতে দেখেছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক।
শহরটিতে বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানিও নেই। এরমধ্যে বৃষ্টি পড়তে শুরু করায় তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে যায়।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভ‚মিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট বøক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের উদ্ধারকারী পরিষেবাগুলো দেশটিতে নিহতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে সিরিয়া আগে থেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, এখন ভয়াবহ এই ভ‚মিকম্পের ধাক্কায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাওয়ায় রাতে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারমধ্যেই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হতাইয়ে একরাশ ধ্বংস্তূপের নিচে আটকা পড়া এক নারীর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল, সাহায্য চেয়ে ডাকছিলেন তিনি। কাছেই প্রাণহীন এক শিশুর দেহ পড়ে আছে।
এই নিরাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে দেনিজ বলে পরিচয় দেওয়া স্থানীয় এক বাসিন্দা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন, হতাশায় হাত মোচড়াচ্ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, তারা আওয়াজ করছে, কিন্তু কেউ আসছে না। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি, আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। ও আল্লা, তারা ডাকছে। তারা তাদের বাঁচাতে বলছে, কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না। কীভাবে আমরা তাদের বাঁচাবো? সকাল থেকে এ পর্যন্ত এখানে কেউ আসেনি।
আঙ্কারা ‘চতুর্থ মাত্রার বিপদসঙ্কেত’ ঘোষণা করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে; কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা জারি করেনি। জরুরি অবস্থা জারি করলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামরিক বাহিনী নামাতে হতো।
এএফএডির কর্মকর্তা ওরহান তাতার জানিয়েছেন, ভ‚মিকম্পে ৫৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে, এ পর্যন্ত ২৮৫টি পরাঘাত হয়েছে এবং সবকিছু মিলিয়ে ২০৪২৬ জন আহত হয়েছেন।
তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৩৭৪০ জন উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ৪১ হাজারেরও বেশি তাঁবু, এক লাখ বিছানা ও তিন লাখ কম্বল দুর্গত এলাকাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
তুরস্কে যাচ্ছে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল
তুরস্কে ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বাংলাদেশের ১০ সদস্যের একটি দল যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন করে সদস্য থাকবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমানে (সি-১৩০) দলটি কাল বুধবার (আজ) তুরস্ক যাবে। এই দলে কারা থাকবেন, কী কী সরঞ্জাম, উপকরণ ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানো হবে, তা ঠিক করা নিয়ে কাজ চলছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এর আগের ভূমিকম্পে তুরস্ককে উদ্ধারকারী দল পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন তারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিল, উদ্ধারকারী দল পাঠানোর দরকার নেই। এবার তারা প্রস্তাব পাওয়ার পরই আগ্রহ দেখায়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।