তুমব্রু খালে ব্রিজ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার

52

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু খাল সংলগ্ন কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে মিয়ানমার সরকার ব্রিজ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে চিঠি দিয়ে বারবার অবহিত করা হলেও নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। বরং আরো দ্রুতগতিতে শ্রমিক সংখ্যা বাড়িয়ে দিন-রাত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার।
নির্মাণাধীন ব্রিজটি মিয়ানমারের ভেতরে হলেও আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের তুমব্রু এলাকার বড় অংশ। ডুবে যেতে পারে বাংলাদেশের কোনারপাড়া গ্রামসহ নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। বুধবার সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজনের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমার সরকার তুমব্রু সীমান্ত খালে ব্রিজ নির্মাণের ফলে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার কোনারপাড়াসহ একটি বিশাল অংশ আগামী বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এসময় তুমব্রু এলাকার অন্তত ১০-১৫হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশংখা করা হচ্ছে। এছাড়াও সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত ৫ হাজার রোহিঙ্গা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে যেতে পারেমিয়ানমার সরকার কৌশলী অবস্থান নিয়ে সীমান্তের রোহিঙ্গাদের তাড়াতে ব্রিজটি নির্মাণ করছে।
তিনি আরো বলেন, এর আগেও মিয়ানমার সরকার তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরাতে নানা চেষ্টা চালিয়েছিল। এমনকি তাদের উপর হামলা, ভয়ভীতি, খালি মদের বোতল নিক্ষেপ, ফাঁকা গুলিবর্ষণ সহ সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এখন নতুন করে খালে ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও ঘুমধুম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছৈয়দুল বশর জানান, পূর্বের চেয়ে শ্রমিক সংখ্যা বাড়িয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, এই ব্রিজটি নির্মাণ হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বসতবাড়ী সহ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের আহবান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত পথ রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২০৮ কিলোমিটার স্থলপথ ও ৬৩ কিলোমিটার জলসীমান্ত। তেমনই এক সীমান্ত, বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কুনারপাড়া তুমব্রæ খালের পাশে নো-ম্যানস্ ল্যান্ডে আশ্রয় নেয় প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে এসে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে এই রোহিঙ্গারা খালের পাড়ে গড়ে তুলেছে একটি বস্তি। এরপর থেকে মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টি এই রোহিঙ্গা বস্তির ওপর।
তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে এই নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছি দেড় বছর আগে। এরপর মিয়ানমার সরকার এখান থেকে আমাদের সরানোর জন্য নানা ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এবার নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে এ ব্রিজটি তৈরী করছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে রোহিঙ্গারা এখানে মরবে।
বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এস এম বায়েজিদ খান সীমান্ত পরিদর্শন করে জানান, তুমব্রু খালের ওপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার করছে। খালের ওপর আগে কাঠের খুঁটি ছিল, সেটি পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেখানে আরসিসি পাকা পিলার দেয়া হচ্ছে। এটি কোনো সেতু বা বাঁধ নয়।
তবে নো-ম্যানস্ ল্যান্ডে কেন তারা এটি নির্মাণ করছে তা জানতে চেয়ে সোমবার মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে চিঠি দিয়েছে বিজিবি। সোমবার দুপুরের দিকে এ চিঠি দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে চিঠির জবাব এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত বিজিপি’র পক্ষ থেকে চিঠির ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে।