তীব্র পানি সংকটের আশঙ্কা যথাযথ পদক্ষেপ নিন

48

বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরোপ প্রভাবের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ঝুঁকিগুলোর আশঙ্কা আছে সেগুলো আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। স¤প্রতি জলবায়ু ও পানি সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘ওয়াটার পলিসি’তে প্রকাশিত ‘অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ওয়াটার ইনসিকিউরিটি ইন দ্য হিন্দুকুশ অ্যান্ড হিমালয়া : ইনসাইটস ফ্রম বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল অ্যান্ড পাকিস্তান’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয় অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এই অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব যে আটটি দেশের ওপর পড়বে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। অন্যদিকে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট’ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হিমালয় পর্বত অঞ্চল প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় ভূমিকা রাখে। এই অঞ্চল থেকে পাওয়া পানি ব্যবহৃত হয় খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে। নিশ্চিত হয় বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য। প্রায় দশ বছর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রাফট তাদের ‘দ্য ক্লাইমেট চেঞ্জ ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, খরা, ঝড় ও সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ।
এরপর থেকে এ নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয় অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। আর এর ফলে এই অঞ্চলে তীব্র পানি সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের জন্য তীব্র পানি সংকটের আশঙ্কা যদি থাকে, তবে বিষয়টি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। আমলে নেয়া সমীচীন- প্রতিবেদনটিতে এমনও বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বেড়ে যাওয়ায় ঝরনা ও নদীনির্ভর পানি ব্যবস্থাপনার প্রতি নির্ভরতাও বেড়েছে। কিন্তু এই দুই উৎস চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে সক্ষম নয়। ফলে ভূগর্ভস্থ উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে, যা তীব্র পানি সংকটের কারণ হতে পারে। আমরা বলতে চাই, পানির অপর নাম জীবন- ফলে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হলে তার ভয়াবহতা কিরূপ হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে প্রতিবেদনে এই সংকট নিরসনে পার্বত্য এলাকায় নগরায়ণের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার যে সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
উল্লেখ্য, এমন সতর্ক বিষয়ও সামনে এসেছে- পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চল হিমালয়ের এই দ্রæততর অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কোটি কোটি মানুষ গভীর পানি সংকটে পড়বে। আমরা মনে করি,এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্টদের সংকটের বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পুরো হিমালয় অঞ্চল ছড়িয়ে আছে ৪২ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে- যা আটটি দেশের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো, আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। পার্বত্য অঞ্চলে সংস্থান হয় প্রায় ২৪ কোটি মানুষের জীবিকা। ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট’ তাদের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানিয়েছে, হিমালয় পর্বত অঞ্চল প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় ভূমিকা রাখে। এই অঞ্চল থেকে পাওয়া পানি ব্যবহৃত হয় খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে। নিশ্চিত হয় বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পানির উৎসগুলোর অতিব্যবহার ঘটার ফলে বাসিন্দাদেরও ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে এক হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে এমনটিও জানা গেছে। আর যথাযথ পরিমাণে ও যথাযথভাবে পরিকল্পিত পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা তৈরি করা না গেলে ভূ-গর্ভের পানির ওপর অত্যধিক নির্ভরতা ভবিষ্যতে আরো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করার যে বিষয়টি সামনে আসছে- তাও আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে পানি সংকটের যে আশঙ্কার বিষয়টি সামনে এলো, তা আমলে নেয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশের গবেষক তানভীর হাসান বলেছেন ‘কেবল জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয় অঞ্চলের পানি সংকটের কারণ নয়, অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণও এর জন্য দায়ী। এর কারণে পার্বত্য অঞ্চলে পানির সংকটের পাশাপাশি দূষণ ও মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’ ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এই সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।