তীব্র তাপে দহন কমবে কখন

30

তুষার দেব

আশ্বিনের মধ্যভাগে এসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। তবে তা আগামী এক পক্ষকালের মধ্যে দেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিতে পারে। অক্টোবরের প্রধমার্ধেই মৌসুমি বায়ুর বিদায়ের সম্ভাবনা বেশি দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। এরপর আবহাওয়া পরিস্থিতিতে শুরু হবে হাওয়া বদলের আয়োজন। নভেম্বরে রাত ও দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে হালকা কুয়াশার চাদরে জানান দেবে শীতের আগমনী বার্তা। এমনটাই পূর্বাভাস আবহাওয়া অধিদপ্তরের।
গত বছর বেশ খানিকটা বিলম্বেই দেশ থেকে বিদায় নিয়েছিল দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাকাল। অক্টোবরের শেষসপ্তাহে গিয়ে দেশের স্থলভাগ ও সাগরবক্ষ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছিলে মৌসুমি বায়ু। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তিন মাস মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। উভয় মাসেই বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে নভেম্বরে দুটি নিম্নচাপের একটি ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এছাড়া অক্টোবরের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশ থেকে বিদায় নিতে পারে। আর নভেম্বরে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবহাওয়ার সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও বিদ্যমান তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক পূর্বদেশকে বলেন, নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত সপ্তাহে দেশজুড়ে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টি ধরে যাওয়ার পর থেকে উষ্ণতা অনুভ‚ত হচ্ছে। তবে অঙ্কের হিসেবে এই উষ্ণতা এখন তাপপ্রবাহের ঘর ছুঁতে পারেনি। মৌসুমি বায়ুর বিদায়ের কাছাকাছি এসে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ফের বাড়তে পারে। যদিও সেই বৃষ্টি ভ্যাপসা গরমের অনুভ‚তিতে প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে একটি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। স্থলসীমা পেরিয়ে এ অঞ্চলে আসতে আসতে সেটি আর ঘূর্ণিঝড় থাকবে না। তবে এর প্রভাবে বৃষ্টি হবে এ অঞ্চলে। আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবহাওয়ায় কমবেশি এমন পরিস্থিতিই বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়ার ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, সাধারণত নভেম্বর মাসে ক্রমাগতভাবে তাপমাত্রার নি¤œমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীত চেনারূপে ধরা দেয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদায় নিলে হিমালয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী দেশের সর্ব-উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া হয়ে হিমেল হাওয়ার প্রবেশের পথ সুগম হবে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরে দেশজুড়ে শীতের কামড় টের পাওয়া গেলেও জানুয়ারিতে সবচেয়ে তীব্র হাঁড়কাপানো শীত অনুভূত হয়। এজন্য জানুয়ারিকেই দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ঋতু-পরিক্রমা বা বাংলা বর্ষপঞ্জিকার হিসাবে পৌষ ও মাঘ- এই দুই মাসকেই শীতকাল ধরা হয়। এই সময়ে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করার কারণে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলোতে সূর্যের রশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। আর তাতে তাপমাত্রার পারদও নি¤œমুখী হতে থাকে। বিশেষ করে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সর্বনি¤œ তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। আবহাওয়ায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করে বিধায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশগুলোতে শীত অনুভূত হয়। তবে হিমেল হাওয়ার উৎসস্থল হিমালয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী দেশের সর্বউত্তরের জনপদ পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া এলাকা দিয়েই কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকেই হিমেল হাওয়ার আগমন অনুভূত হতে থাকে। শরৎ ও হেমন্তের পালাবদলের সময়েই দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। পাশাপাশি রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে। উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে শীত ঋতু।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে পরবর্তী দু’দিন বা আটচল্লিশ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেটাই দেশের শীত মৌসুমের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।