তীব্র তাপে কাতর জনজীবন বাড়ছে নানা রোগব্যাধি

22

ফারুক আবদুল্লাহ

বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে তাপমাত্রা। ১৯৮০ সালের পর থেকে উত্তপ্ত দিনের সংখ্যা দুইগুণ বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের পাঁচটি বড় শহরে। এমন তীব্র তাপে কাতর হয়ে উঠেছে জনজীবন। যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলছে। এর ফলে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছে মানুষ। বাড়ছে রোগব্যাধি।
এদিকে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর আউটডোরে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। নিউমোনিয়া প্রায় শতভাগ শিশুদের সংখ্যা হলেও ডায়রিয়া কমবেশি সবার। তবে হাসপাতালের ইনডোরে রোগী ভর্তি স্বাভাবিক রয়েছে।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, প্রতি বছরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে এমন দিনের সংখ্যা ১৯৮০’র দশকের তুলনায় এখন দ্বিগুণ বেড়েছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়, ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে এমন দিনের সংখ্যা ১৯৮০’র পর থেকে প্রতি দশকেই বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে ১৯৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বছরে ১৪ দিন তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। আর ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতি বছরে এ সংখ্যা ছিল ২৬ দিন। একই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি উঠেছিল এমন দিনের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে অন্তত দু’সপ্তাহ করে বেড়েছে।
বিশ্বে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা দ্রæতগতিতে বাড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়ে জাতিসংঘ বলেছে এজন্য নিঃসন্দেহে দায়ী মানুষের কর্মকান্ড। জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার কমিটি বা আইপিসিসি’র এক গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, প্রচন্ড ভারী বৃষ্টিপাত, সাইক্লোন হতে দেখা যাচ্ছে, তাতে জলবায়ুর এই পরিবর্তন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শিল্পযুগের আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, আগামী দু’হাজার তিরিশ সালের মধ্যে সেই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এর আগে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, এখন বলা হচ্ছে তার দশ বছর আগেই সেটা ঘটে যাবে।
আন্তর্জাতিক এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে সেই ধারা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রামসহ দেশের পাঁচটি বড় শহর আগামী কয়েক বছরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।
গবেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী এই চারটি জেলা শহরে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য বা তারতম্য কমে আসবে, ফলে সবসময় গরম অনুভূত হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে রাজধানী ঢাকা শহরের দিনের তাপমাত্রা ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সালে অর্থাৎ এই ২০ বছরে গ্রামাঞ্চলের তাপমাত্রার তুলনায় ২ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে আরো তিনটি শহরে- বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বেড়েছে ১ দশমিক ৯২ ডিগ্রি, খুলনায় ১ দশমিক ২৭, সিলেটে ১ দশমিক ১, রাজশাহীতে বেড়েছে সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ২০২১ সাল সবচেয়ে বেশি উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। এর ফলে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হতে পারে মানুষকে।
এদিকে আশ্বিন মাসে গরমের মাত্রা ছাড়াচ্ছে। চারদিকে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। খুব ছোট শিশু থেকে শুরু করে কমবেশি সব বয়সের মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর আউটডোরে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। নিউমোনিয়া প্রায় শতভাগ শিশুদের সংখ্যা হলেও ডায়রিয়া কমবেশি সবার। এছাড়া জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ভাইরাস জনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি বাড়লে জ্বর, কাশি, সর্দি, অবসাদ, এলার্জি, ফুড পয়জনিং বা বদহজমের কারণে বমি বা ডায়রিয়া, শরীরে পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোক ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। আর গরমে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর লবণ ও পানি হারায় আমাদের ত্বক। এই পানির ঘাটতি পূরণ না করলে পানিশূন্যতা হতে পারে। এর লক্ষণ হিসেবে মাথা ঝিমঝিম করে, ক্লান্তি লাগে, প্র¯্রাবের রং গাঢ় হয়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে বারবার পানি পান করতে হবে। আর শসা, লেবু-পানি, ডাব ইত্যাদি ফল বেশি বেশি খাওয়া উচিত। অ্যালকোহল, চা-কফি বরং এড়িয়ে যাওয়া ভালো। কেননা, এগুলো শরীরে পানিশূন্যতা বাড়ায়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গরমের কারণে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালের আউটডোরে এসব রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া বেশি আর ডায়রিয়া কমবেশি সবার। এছাড়া গরমের কারণে এলার্জি, ফুড পয়জনিং, ভাইরাস জনিত রোগ হতে পারে। তাই সর্তক থাকা উচিত।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। এসময়ে জ্বর, সর্দি হচ্ছে প্রায়। আর বৃষ্টির পর পর ডেঙ্গু বাড়ছে। শিশুদের জ্বর, সর্দি ও কাশি হচ্ছে। দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা একারণে ভাইরাস জনিত রোগও হচ্ছে। তবে খুব সিরিয়াস কিছু না। একটু বাড়তি সর্তকতা অবলস্বন করলে সুস্থ থাকা সম্ভব।