তিন হাতিকে অভয়ারণ্যে ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ

12

পূর্বদেশ অনলাইন

প্রায় দশ বছর আগে দলবদ্ধ হাতির পাল এসেছিল আনোয়ারা-কর্ণফুলী সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায়। সেখান থেকে তিনটি হাতি কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় দলছুট হয়ে থেকে যায়।

পরে প্রায় সময় খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসে হাতিগুলো, নষ্ট করে ফসল। এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১১ জন, আহত হয়েছেন অনেকে।

স্থানীয়রা চেষ্টা করেও হাতিগুলোকে গহীন পাহাড়ে ফেরাতে পারেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসন থেকে নানান উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়।

এ অবস্থায় সেই হাতিগুলোকে অভয়ারণ্যে ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি পার্বত্য জেলা থেকে মাহুত এনে হাতিগুলোকে বশে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, হাতিগুলো কর্ণফুলী এলাকায় এসেছে প্রায় ১০ বছর আগে। বিভিন্ন সময় তারা লোকালয়ে নেমে আসে। জমির ফসল ও জানমালের ক্ষতিসাধন করে। কোনভাবেই হাতিগুলোকে দমানো যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের কাছে কয়েক দফা নালিশ করা হয়েছে। নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, হাতিগুলোকে অভয়ারণ্যে ফেরানোর উদ্যোগ নেবেন।

উল্লেখ্য, হাতি রক্ষায় ২০১৯ সালে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। এর মধ্যে চলতি বছর ২০টি হাতি মারা গেছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। এছাড়া হত্যা করা হয়েছে ১৩টি। কোনোমতে টিকে আছে ২৬২টি বন্য হাতি। জমির ফসল পাকার সময় হাতি লোকালয়ে চলে আসে। এজন্য শ্রীলঙ্কা-থাইল্যান্ডে বন বিভাগ পেশাদার মাহুত নিয়োগ দেয়। এই মাহুতরা জিপিএস সিস্টেমের মাধ্যমে হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। এরপর লোকালয় ও জমির দিক থেকে তাদের চলাচলের পথ ঘুরিয়ে অভয়ারণ্যমুখি করে দেন। হাতির নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় বন বিভাগ ১২টি করিডর সংরক্ষণে নির্দেশনা চেয়েছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, হাতিগুলোকে সংরক্ষণের জন্য আমাদের নিয়মিত টহল দল কাজ করছে। স্থানীয় জনগণকে আমরা প্রতিনিয়তই সচেতন করছি। যদি হাতিগুলো কারও সম্পদের ক্ষতিসাধন করে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও হাতির আক্রমণে কেউ গুরুতর আহত হলে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন, যদি মারা যান তাহলে ৩ লাখ টাকা পাবেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

তিনি আরও বলেন, যদি কেউ হাতি হত্যা করে- তাহলে ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং এ অপরাধ যদি কেউ পুনরায় করে, তাহলে ১২ বছরের জেল ও ১৫ লাখ জরিমানা করার বিধান রয়েছে। বাঁশখালীর লটমনিতে হাতি হত্যার দায়ে দেশে প্রথমবারের মতো গত ১৪ ডিসেম্বর ২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা বলেন, বিভিন্ন সময়ে হাতির আক্রমণের শিকার অনেক ব্যক্তি আমাদের কাছে বিচার নিয়ে এসেছেন। হাতিগুলো খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে এসে ফসলের ক্ষতিসাধন করে। আমরা এ হাতিগুলোকে কিভাবে অভয়ারণ্যে ফেরানো যায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, হাতিগুলোকে অভয়ারণ্যে ফেরানোর জন্য পার্বত্য জেলা থেকে মাহুত আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তারা দুই থেকে তিন মাস উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় হাতিগুলোর সঙ্গে মেলামেশা করবেন এবং বশে আনার চেষ্টা করবেন। পরে মাহুতরা হাতিগুলোকে অভয়ারণ্যে নিয়ে যাবেন।