তিন প্রকল্পে পাল্টে যাবে ৬ উপজেলা

79

রাহুল দাশ নয়ন

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় উপজেলায় তিনহাজার ৩৬০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আগামী তিন বছরের মধ্যেই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পটিয়ার একহাজার ১৫৮ কোটি টাকার ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি’ একনেকে অনুমোদনের পর টেন্ডার করা হয়েছে। আগামী মাসের দিকে এ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শুরু হবে। এছাড়াও বাঁশখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশের সাগর, নদী-খালের ভাঙনরোধে আরো দুইহাজার ২০৩ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এই দুই প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় সাতটি নদী-খালের ভাঙনরোধে ৪৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পটি আগামী সপ্তাহেই বোর্ডে পাঠানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে সাঙ্গুনদীর যেসব কানেকশন খাল আছে সেগুলোর ভাঙনরোধ হবে। এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসাগুলো জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধনের জন্য এ প্রকল্পের গুরুত্ব আছে। পটিয়ার প্রকল্পে পিডি নিয়োগ করা হয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। টেন্ডার শেষ হলেই কাজ শুরু করা হবে।’
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাঁশখালী ও আনোয়ারার সংমিশ্রণে একহাজার ৭৩০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। ডিজাইনের কাজও শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ প্রকল্পটি বোর্ডে পাঠানো হবে। সেখানে প্রস্তাব প্রেরণের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাগর, নদী ও খালের ভাঙনরোধ হওয়ার পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে।’
পাউবো সূত্র জানায়, পটিয়ায় একহাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প’ অনুমোদন হওয়ার পর এখন কাজ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। প্রকল্পের অধীনে শ্রীমাই খাল ১৭৫০ মিটার, শিকলবাহা নদী ৭০০ মিটার, বোয়ালখালী নদী ২০০ মিটার ও গরুলুডা খাল ৩০ মিটিার মিলিয়ে ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, আলম, উপকাজি, মীরবাড়ি, খান মোহনা, শ্রীমাই শাখা, দক্ষিণ ভূর্ষি, চৌধুরী-আহলাই, গরুলুডা, শ্রীমাইখাল, বাঁকহারা খাল ও চাঁদখালী খাল নিয়ে ১১টি খালের ৩০ দশমিক ২০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা, শিকলবাহা-চাঁদখালী-বোয়ালখালী নদীর ডান তীরে ২২ দশমিক ২০০ কিলোমিটার এবং চাঁদখালী নদীর বাম তীরে ৩ দশমিক ৩১০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, বিভিন্ন এলাকায় ২৬টি রেগুলেটর নির্মাণ, চাঁদখালী নদীর ডান তীরে ২৩৫০ মিটার, চাঁদখালী নদীর বাম তীরে ৮৫০ মিটার এবং বোয়ালখালী নদীর ডান তীরে ১০০ মিটার মিলিয়ে ৪ দশমিক ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, খানমোহনা এবং ধলঘাট স্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চাঁদখালী নদীর উপর ৮০মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ এবং ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫৮ দশমিক ৯২৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের টেন্ডার কার্যক্রম চলমান আছে।
বাঁশখালী ও আনোয়ারায় একহাজার ৭৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ কর্তৃক উপকূল সুরক্ষায় এ প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। প্রকল্পের অধীনে সাঙ্গু নদীর বাম তীর পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ ইউনিয়নের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, জলকদর খালের সাধনপুর অংশের সাঙ্গু নদীর মুখ থেকে ১৭ কিলোমিটার খনন, জলকদর খালের ছনুয়া অংশ পর্যন্ত উভয় পাশের ৮০ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উভয় তীর নির্মাণ, পুঁইছড়ি, ফুটখালী, চাম্বল ও গন্ডামারার পূর্ব বড়ঘোনায় চারটি স্লুইচ গেট নির্মাণ, পুঁইছড়ি ও নাপোড়া ছড়ার ওপর দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ, লবণ চাষীদের সুবিধার্থে ছয়টি আউটলেট ইনলেট নির্মাণ করা হবে। একইসাথে উপজেলাজুড়ে থাকা প্রায় ৫০টি স্লুইচ গেট পুনঃনির্মাণ করা হবে।
সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ উপজেলার নদী ও খালে ভাঙনরোধে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ৪৭৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প পানি বোর্ডে পাঠানো হবে। ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলার টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা’ নামক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, ভাঙনরোধ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পের অধীনে সাঙ্গু নদীর তীর সংরক্ষণ ৪ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার, সাঙ্গু নদীর তীর মেরামত ৯৩ মিটার, টঙ্কাবতী খালের তীর সংরক্ষণ ২দশমিক ৭ কিলোমিটার, হাঙ্গর খালের ১দশমিক ১ কিলোমিটার, ডলু নদীর তীর সংরক্ষণ ১ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার, সুখছড়ি খালের তীর সংরক্ষণ ৪ মিটার, বরুমতী খালের তীর সংরক্ষণ ৪ মিটার, ধোপাছড়ি খালের তীর সংরক্ষ ৪ মিটার। সবমিলিয়ে তিন উপজেলায় ১২ দশমিক ২৬ কিলোমিটার কাজ হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, প্রথমে চন্দনাইশেই শুধু ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছিল। বোর্ডের আপত্তির পর এ প্রকল্পটি আরো দুটি উপজেলার সাথে যুক্ত করে ৪৭৬ কোটি টাকার বড় প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সাঙ্গুর শাখা হিসেবে পরিচিত সাতটি নদী-খালের ভাঙনরোধে এ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।