তিন পার্বত্য জেলায় ঘেরাও-বিক্ষোভ

10

সংবিধান ও আইনের বাইরে ভূমি কমিশনে কোনও কাজ হবে না বলে জানিয়েছেন পার্বত্য ভূমি বিরোধ কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবিগুলো লিখিত আকারে আমার কাছে দিয়েছে। আমি সেগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠিয়ে দেবো। সরকার আইন করে আমাদের হাতে বুঝিয়ে দিলে আমরা সেভাবে কাজ করবো।
গতকাল সোমবার সকালে ভূমি কমিশনের সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সকালে পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের বিরোধিতা আর ঘেরাওয়ের মধ্যেই নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা পর রাঙামাটিতে শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা।
সকাল ১১টায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ভবনে স্থাপিত কমিশনের জেলা কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিশনের আগামী সভা ৩ ফেব্রæয়ারি বান্দরবানে হওয়ার কথা রয়েছে।
পার্বত্য ভূমি-বিরোধ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনটি ২০০১ সালে সংসদে পাস করা হয়েছিল। এটি সংশোধন করতে হলেও সংসদে পাস করা লাগবে। যা করার সব সরকারই নির্ধারণ করে দেবে। সে অনুসারেই আমরা কাজ করবো। সরকার আইন বদল না করলে কমিশনের কিছুই করার থাকবে না।
গতকাল সকাল ৮টা থেকে পার্বত্য বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীরা সভাস্থল রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও করে রাখে। প্রধান সড়কটি অবরুদ্ধ থাকায় এ সময় রাঙামাটি শহরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘেরাওয়ের মধ্যেই কমিশন চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক এসে নাগরিক পরিষদের বাধার মুখে পড়েন।
এ সময় তিনি ঘেরাওকারীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া এবং দেশের সংবিধান ও আইনের বাইরে কিছু না করার আশ্বাস দেন। পরে ঘেরাওকারীরা অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দিকে চলে যান এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
ঘেরাও তুলে নেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পরে বেলা ১১টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা, কমিশনের সদস্য তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বোমাং সার্কেল চিফ উ চ প্রূ ও চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায় উপস্থিত হলে শুরু হয় কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক।
পার্বত্য বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সোলাইমান বলেন, ‘আমরা কমিশন চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবিগুলো লিখিত আকারে দিয়েছি। আমরা বলেছি আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত যাতে আর কোনও সভা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়। যদি কমিশন আইন সংশোধন না করে কোনও সভা করতে চায় আমরা তা হতে দেবো না।
বোমাং সার্কেল চিফ উ চ প্রূ বলেন, ‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। পার্বত্য অঞ্চলে যারা বাস করেন তাদের বাস্তুহারা হওয়ার ভয়ের কোনও কারণ নেই।
এদিকে বান্দরবানে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৬’ সংশোধনের দাবি জানিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন নবগঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতারা।
সোমবার দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আহব্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূইয়া স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপি দেন তারা।
অন্যদিকে খাগড়াছড়িতে ভ‚মি কমিশন কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। গতকাল দুপুরে জেলা শহরের ঈদগাঁ মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে খাগড়াছড়ি মাস্টারপাড়াস্থ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় আহব্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আলম মামুন ভূইয়া, যুগ্ম আহব্বায়ক আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব এসএম মাসুম রানা, কমিটির সদস্য মাইন উদ্দিন, প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ, আসাদ উল্লাহ আসাদ, লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, আনিসউজ্জামান ডালিম, সাদ্দাম হোসেন, নজরুল ইসলাম মাসুম, সালমা আহমেদ মৌ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, জনসংখ্যা অনুপাতে কমিশনে বাঙালি সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা ছাড়া এক তরফা অনির্বাচিত ও প্রথাগত আইনের মাধ্যমে বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের দিয়ে কমিশনের কার্যক্রম করতে দেয়া হবে না।
পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।