তাড়াহুড়ো করতে ‘নিষেধ করেছিলেন’ প্রধানমন্ত্রী

44

তাড়াহুড়ো করে বিজয় দিবসের আগে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজাকারের তালিকায় নাম আসায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে প্রকাশের তিন দিনের মাথায় গতকাল বুধবার ওই তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরে সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে ওই তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যেসব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকায় এসেছে তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে যারা কষ্ট পেয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন তাদেরকে বলব- দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যারা শহীদ পরিবার তারা সব সময় আমাদের কাছে সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তারা জাতির কাছে সব সময় শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে থাকবেন’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা খুব স্বাভাবিক একটা মানুষের কষ্ট লাগবে। যার পরিবারের মানুষ শহীদ হলো, যারা এতো কষ্ট করল, যারা মুক্তিযুদ্ধ করলো তাদের যদি রাজাকার বলা হয় এর থেকে দুঃখের কষ্টের আর কিছু থাকে না’। এই তালিকা কোনোভাবেই রাজাকারের তালিকা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার খেতাব দেওয়া হবে না, হতে পারে না। এটা অসম্ভব। অন্তত আমার সময় না। এটা কোনো দিন আমরা হতে দেব না। যারা রাজাকার তাদের তো আলাদা গেজেট করাই আছে। কাজেই কোনো মতে এই তালিকা রাজাকারের তালিকা না’।
এই তালিকা প্রকাশে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছিলাম। কিন্তু কেন এটা দিয়ে দিলেন আমি জানি না। এটা দেওয়ার কথা ছিল না। বিশেষ করে বিজয় দিবসের আগে না’। খবর বিডিনিউজের
সংশোধনের জন্য রাজাকারের তালিকা স্থগিত
গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ ওই তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বরিশাল, বরগুনা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঝালকাঠি জেলার মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজনের নাম দেখে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ কর্মসূচিও দেওয়া হয়। এই তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে তালিকা সেটা সংশোধনের জন্য আজকে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। গতকালকেও কথা বলেছি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
এই তালিকায় যারা এ দুঃখ পেয়েছেন তাদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কাছে বলছি যে, এটা আমি যেহেতু সরকার প্রধান এখানে আমারও আরো একটু শক্ত হয়েই বোধ হয় বলা উচিত ছিল- যে এখন আপনি করছেন কেন?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় দিবস সমগ্র বাংলাদেশে উদ্যাপন হয়েছে আর তখন এইটা আসাতে যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যারা আনন্দঘন পরিবেশে বিজয় দিবস উদ্যাপন করবে তাদের মনে কতটা আঘাত লাগতে পারে সেটা একবার চিন্তা করে দেখেন। কাজেই আমি সেটা উপলব্ধি করতে পারি। সে জন্যই তাদের বলব, কোনো দিনই তারা রাজাকারের তালিকায় থাকতে পারে না। এটা কখনো হতে পারে না। এটা তারা নিশ্চিত থাকুক। এটা ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে’।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, রাজাকারের তালিকা এবং রাজাকার, আল বদর, আল শামস কিন্তু গেজেটেড। আপনারা যদি সেই সময়ের পত্রিকাও দেখেন সেই পত্রিকাতেও কিন্তু এগুলো ছাপা আছে। ট্রাইব্যুনাল যখন হয় করাচি থেকে অনেক পত্রিকার কাটিং আমরা নিয়ে এসেছিলাম। সেগুলো আমরা সংগ্রহ করেছিলাম’।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর জিয়াউর রহমানের আমলে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পুনরায় শুরু করেছি। কাজেই আমি বলব এটা নিয়ে আর কোনো মন খারাপ না করা, আর যাচাই বাছাই করা হবে। যারা প্রকৃত দোষী অবশ্যই তাদের শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এটা করা হবে’।