তারের জঞ্জাল যদি যায় মাটির নিচে

60

তুষার দেব

নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত সর্বত্র ঝুলে আছে বিভিন্ন সেবা সংস্থার উন্মুক্ত তারের জঞ্জাল। কোথাওবা তা অতি মাত্রায় বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে। বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে টেনে নেয়া এসব তারের জঞ্জাল কেবল নগরীর সৌন্দর্যহানি বা শ্রীহীন করছে না, পথচলতি নাগরিকদের মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকিকেও অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বিটিআরসি ও চসিকের রশি টানাটানির কারণে তারের জঞ্জাল নিয়ন্ত্রণে আনা দূরের কথা, উল্টো দিনকে দিন তার পরিসর বেড়েই চলেছে। নগরীর ব্যস্ততম জিইসি মোড়সহ একাধিক স্থানে বিভিন্ন সময়ে তারের জঞ্জালজনিত সৃষ্ট দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে। কিন্তু কোনও সংস্থাই ঝুঁকিপূর্ণ তার সরানোর দায়ভার নেয় না। নগরীর নান্দনিক রূপ ফিরিয়ে আনতে চসিকের বিলবোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় অনেক জায়গায় এলোমেলোভাবে তার কাটা হয়েছে। অনেক জায়গায় রয়েছে অবৈধ তার। সেগুলো নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে বলার পরও তাতে কাজ হয়নি। বিশেষ করে, ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগকারীরা ইচ্ছামত ও এলোভাবে লাইন ব্যবহার করার ফলে অবিন্যস্ত তারের জঞ্জাল বাড়ছে।
নগরী ঘুরে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে অসংখ্য তার বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে। চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, টাইগারপাস, জামালখান, রেয়াজউদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, আগ্রাবাদ, চেরাগি পাহাড় মোড়সহ প্রায় সর্বত্র কমবেশি বিপজ্জনক অবস্থায় তারের জঞ্জাল রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি, সড়ক বাতির খুঁটি, ভবন, মার্কেট, দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে এলোমেলোভাবে বয়ে গেছে সেবা সংস্থাগুলোর তার। নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্র আছে তারের জঞ্জাল। কোথাও পথচারীর মাথাও স্পর্শ করে এসব তার। কাটা-ছেঁড়া তার লুটিয়ে পড়ে থাকে সড়কে।
স্থপতি আশিক ইমরান এ বিষয়ে পূর্বদেশকে বলেন, শহরে রাস্তাঘাট-ফ্লাইওভার করা হলো, অথচ ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল নিয়ে চোখে পড়ার মত কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেই। তারের জঞ্জাল কেবল দৃষ্টিকটু দেখায় না, একইসাথে নাগরিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, হঠাৎ করে এসব তার কেটে ফেললে জনভোগান্তি সৃষ্টি হবে। এখন শহরে প্রায় সবাই মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট-ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করছে। সেবাদানকারী সংস্থাগুলো পরস্পর সমন্বয় করে মাটির নিচে নতুন লাইন স্থাপন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব তারের সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু পূর্বদেশকে বলেন, এ বিষয়ে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অস্ট্রেলিয়ার একটি সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছি। সংস্থার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, বিটিআরসি, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সাথে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবে। সেখানে নিজ নিজ সংস্থার তরফ থেকে বিদ্যমান সমস্যাগুলো প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হবে। সবপক্ষের মতামত নেয়ার পর প্রতিনিধি দলটি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং সিস্টেমের জন্য জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। জরিপ শেষে তারা আমাদেরকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা নগরীকে নান্দনিক শহরে রূপ দিতে বদ্ধপরিকর। তারের জঞ্জালমুক্ত করতে পারলে অগ্নি-দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন দুরীভ‚ত হবে, তেমনি নগরের সৌন্দর্য অনেকাংশে স্ব-মহিমায় প্রকাশিত হবে।