তামাকপণ্য বিক্রি সীমিত করার দাবি

48

অন্যদের চেয়ে ধূমপায়ী ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কেননা ধূমপান করলে এমনিতেই শ্বাসনালী ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়। দীর্ঘদিন ধূমপানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগের সমস্যা তৈরি হয়।
ফলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার মত শরীর প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। তাই করোনায় এই সময়টায় তামাক পণ্যের বিক্রি সীমিত করার দাবি জানিয়েছে তামাক বিরোধী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা।
গতকাল শুক্রবার সংস্থাটির উপ পরিচালক নাছিম বানুর স্বাক্ষরিক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ^ব্যাপী মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সারাবিশ্বে মৃতের সংখ্যা বর্তমানে ২৫ হাজার ছুঁই ছুঁই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবিলার মতো কোনো ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এই ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শ^াসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো সর্দি, কাশি, গলাব্যথা এবং জ¦র ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ^াসকষ্ট এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। একে প্রতিরোধ করার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, হাঁচি-কাশির শিষ্ঠাচার মেনে চলাসহ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
আশার কথা হলো, ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দ্বারাই সুস্থ হয়ে উঠছে। যেহেতু এই ভাইরাসের আক্রমণে অন্যদের তুলনায় বয়স্ক এবং রোগাক্রান্তরা বেশি ঝুঁকিতে পড়েন, তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যদের তুলনায় ধূমপায়ীরা করোনা ভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন।
স্যান ফ্র্যানসিসকোর ইউভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, অধূমপায়ীদের তুলনায় করোনা ভাইরাসের ধূমপায়ীদের আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি। গত ১৬ মার্চ, ২০২০ বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ‘করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর’ নামক প্রকাশনায় করোনার ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ত্যাগ করার জন্য সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অন্যের শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করে।
এসব কারণে, অন্যের সঙ্গে এই সময়ে হাত মেলাতেও নিষেধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই অন্য কারো সঙ্গে সিগারেট শেয়ার না করার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুধুমাত্র ধূমপানের কারণেই দেশে অনেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং বাড়তে পারে মৃত্যুঝুঁকি। বর্তমানে সরকারের নির্দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, গণপরিবহণ, শপিংমল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে এবং সকলকে নিজ নিজ বাসায় থাকতে বলা হয়েছে।
এমতাবস্থায় যারা ধূমপান করেন, তারা যদি বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনে ধূমপান করেন তবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও তিনি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবেন।
বিশে^র বিভিন্ন উন্নত দেশে এক শলাকা সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও আমাদের দেশে বিভিন্ন জনাসমাগম স্থলে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশেও ছোট ছোট দোকানে বিক্রি করা হয় খোলা সিগারেট। খোলা এক শলাকা সিগারেট কিনে পান করার সময় সরাসরি আক্রান্ত হতে পারেন ধূমপায়ীরা।
বর্তমানে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সড়কে মানুষের আনাগোনা কমানো হলেও বন্ধ হয়নি এসব তামাকপণ্যের দোকান। এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে তামাকপণ্য বিক্রয়ও তেমন পরিবর্তিত হয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি প্রতিরোধে সকল ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগের অনুরোধ করছি এবং তামাকপণ্য তথা বিড়ি-সিগারেট, সাদা পাতা, জর্দা, গুল, ই-সিগারেট বিক্রয় সীমিত করার দাবি জানাচ্ছি। বিশেষ করে, ছোট ছোট টংয়ের দোকান, মুদির দোকানে এক শলাকা সিগারেট বিক্রয় বন্ধের জন্য প্রশাসনের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহব্বান করছি। তামাকপণ্যের বিক্রয় সীমিত করলে শুধু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিই হ্রাস হবেনা, সাথে সাথে ধূমপায়ীরাও করোনা ভাইরাসের মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে পারবে। তাই, মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ তামাকপণ্যের বিক্রয় সীমিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা রাখে তামাক বিরোধী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা।