তাপদাহ আরও বিস্তৃত হতে পারে আজ

13

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গতকাল শনিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পারদ চড়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এই মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, টানা দুইদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে। কালকে (আজ) তাপমাত্রা বেশিরভাগ এলাকায় বাড়বে। এ সময়ে ৪৩ ডিগ্রির আশেপাশেই থাকবে তাপমাত্রা। তবে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
গত বছর ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
এপ্রিল এমনিতেই দেশের উষ্ণতম মাস। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরুতে গরমের তীব্রতায় হাঁসফাঁস করতে হয়।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদের ভাষ্য, গত বছর বাতাসে আর্দ্রতা কম ছিল। এবার আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে মানুষের শরীর ঘামছে, অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাত কম। কালবৈশাখী এবং বৃষ্টি না থাকার কারণে এবার গরমের তীব্রতা বেশি।”
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার বুলেটিনে দেশের ৪২ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ তাপপ্রবাহ আরও বেশি জায়গায় বিস্তার করতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ শাহীনুল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আর মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাকি অংশে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

মে মাসের শুরুতেবৃষ্টির আভাস : এবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা না থাকায় চৈত্র মাসের শেষ সময় থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত টানা ২৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। এর আগে কোনো বছরই এতো সময় ধরে দাবদাহ চলেনি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম।
তিনি জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডেটা সংরক্ষণ রাখা আছে। চলতি মৌসুমের আগের ৭৫ বছরের মধ্যে টানা সর্বোচ্চ ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে চলে ২০২৩ সালে। ওই বছরের এপ্রিলের শেষ ১৮ দিন ও মে মাসের শুরুর ৫ দিন দাবদাহ ছিল দেশে।
রেকর্ড দাবদাহের মধ্যেই স্বস্তির খবর দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি গতকাল বলেন, মে মাসের ২ তারিখের দিকে বৃষ্টি হতে পারে। এটা কয়েকদিন থাকার সম্ভাবনা আছে, তখন তাপমাত্রা কমবে।
বাংলাদেশে মে মাসেও গরমের দাপট যে বেশি থাকে, সে কথা তুলে ধরে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের (এনএওএমআই) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সমরেন্দ্র কর্মকার মনে করিয়ে দিলেন, ১৯৭২ সালে এই মে মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।