তবে কি চামড়া ভারত পাঠানোই উদ্দেশ্য

18

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নতুন চামড়া শিল্প নগরী গড়ে ওঠার মধ্যে বাংলাদেশে কাঁচা চামড়া নিয়ে সঙ্কট এবং রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘আমার দেশ আমার শিল্প’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই সন্দেহের কথা প্রকাশ করেন।
এবার কোরবানির ঈদের পর থেকে আলোচনায় পশুর চামড়া। বাংলাদেশে ট্যানারিগুলোতে চামড়ার মোট চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটে কোরবানির পশু থেকে। এবার কাঁচা চামড়ার ব্যাপক দরপতনের কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে কেনার পর তা আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দেয় কিংবা পুঁতে ফেলে।
এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। তাতে আড়তদাররা খুশি হলেও ট্যানারি মালিকরা আপত্তি জানিয়ে বলে, এই সিদ্ধান্ত দেশের শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।
এবার চামড়ার দরপতনের পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে ফখরুল মনে করেন। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ভারতের নতুন চামড়া শিল্প নগরী গড়ে ওঠার কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের
ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর গরু জবাইয়ে কড়াকড়ির পর কানপুরের চামড়া শিল্প নগরীর ধুকতে থাকার মধ্যে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বানতলায় চামড়া শিল্পের বড় প্রকল্প উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বানতলাকে রাজ্যের ‘কর্মদিগন্ত’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, সারা ভারতে চামড়া শিল্পের সবচেয়ে বড় ‘হাব’ হবে এটি। ৮০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে এই প্রকল্পে। কানপুরের ব্যবসায়ীদেরও এখানে জায়গা দেওয়া হবে।
এই তথ্যটি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর সঙ্গে যদি আমরা রিলেট করি যে, আমাদের চামড়া শিল্পের ব্যাপারে এবার সমস্যাটা কোথায় হল?
হঠাৎ করেই বলা হল, রপ্তানি হবে। রপ্তানি করে এই চামড়া যাবে কোথায়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যদিকে আমাদের ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলে আমাদের কর্মসংস্থানের বিশাল ক্ষতি হবে। একই সঙ্গে চামড়া শিল্পের যে ভবিষ্যৎ, সেটা নষ্ট করে দেওয়া হবে।
কাঁচা চামড়া রপ্তানিতে আড়তদাররা আগ্রহী হলেও বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সরকারের কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ আসেনি। সম্প্রতি চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, রপ্তানির বিষয়ে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের বিকাশে সরকার সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। ট্যানারিগুলো ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা কাজে সরকারের অবহেলা ছিল বলে তার অভিযোগ। ফলে ট্যানারি শিল্প, লেদার শিল্প আজকে মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলোর হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল বলেন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ফলে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কানেকটিভি তৈরি হচ্ছে- খুব ভালো কথা, আমাদের মানুষের আয় বাড়ছে-খুব ভালো কথা; কিন্তু এটাকে টেকসই করতে হলে যে শিল্পের প্রসার দরকার এবং যে কর্মসংস্থান দরকার, সেটা আমরা করতে পারছি না।
পরিসংখ্যানগুলোতে বেরিয়ে এসেছে যে, এখানে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে না। আমরা গার্মেন্টসই আছি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্ডস্ট্রি বলতে গার্মেন্টস। এখান থেকে যতক্ষণ না আমরা বেরিয়ে এসে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে পারব, আমরা সত্যিকার অর্থে ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপড কান্ট্রি হতে পারব না।
অনুষ্ঠানে চামড়া শিল্পের উপর মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন টিএস আইয়ুব। বাবুল তালুকদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগের শাসনে দেশের সব ক্ষেত্রে লুটপাট চলছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, এই সরকারটা প্রতারক সরকার। এরা হয়ে গেছে এখন ফর দ্য লুটেরাজ, বাই দ্য লুটেরাজ, অফ দ্য লুটেরাজ। এখানে লুট ছাড়া আর কিছু নেই। একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত শুধু লুট চলছে।
ফখরুল বলেন, টিআর-কাবিখা থেকে শুরু করে একেবারে মেগা প্রজেক্ট পর্যন্ত সব ভাগ-বাটোয়ারা চলছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হলে দেশপ্রেমিক নেতাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবার মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পুনরায় জানান ফখরুল।