তবুও ঘরে ফেরার আনন্দ

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় ফিকে হওয়া ঈদ আনন্দ আবার ফিরছে। ঈদের আনন্দ নিয়ে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। করোনায় দুই বছর নিরানন্দ ঈদ কাটলেও এবার ঈদ উদ্যাপন হবে অনেকটা মুক্ত পরিবেশে। এবার রেকর্ডসংখ্যক মানুষ গ্রামে ঈদ করবেন। ইতিমধ্যে অনেক মানুষ শহর ছেড়েছেন। আজ-কালকের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করতে যাবেন। ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভাড়া, যানজটসহ আছে নানা ভোগান্তি। এসব ভোগান্তি এড়িয়ে আনন্দ উপভোগে নাড়ির টানে ছুটছেন সবাই।
ঈদ শুধু উৎসব নয়, নগরবাসীর কাছে নাড়ির টানে গ্রামে ফেরার আয়োজন। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় দুই বছর পর এবার ঈদুল ফিতর হতে যাচ্ছে আনন্দঘন পরিবেশে। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ না থাকায় এবার রেকর্ডসংখ্যক মানুষ গ্রামে ঈদ করতে ছুটছেন। তাছাড়া এবার ঈদের ছুটি তুলনামূলক দীর্ঘ। দুই বছর পর এমন দীর্ঘ ছুটিতে শহরে বসে থাকতে চান না মানুষ। কর্মব্যস্ততার চাপে চিড়েচ্যাপটা হওয়া মানুষ ঈদে বাড়ি ফিরে পেতে চান প্রশান্তির ছোঁয়া। এই ¯্রােতে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত কোনো ভেদাভেদ থাকছে না। জীবিকার প্রয়োজনে শহরে থাকলেও অনেকের পরিবার থাকে গ্রামে, আবার অনেকে পরিবারসহ শহরে থাকলেও ঈদে ছুটে যান গ্রামে। সবার উপস্থিতিতে গ্রামে ঈদের সময় একটি পরিবারিক মিলনমেলায় রূপ নেয়।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ইলিয়াছ উদ্দিন
বলেন, পুরো বছর কর্মব্যস্ততায় থাকা হয়। ঈদে গ্রামে সবার সাথে দেখা হয়। সবাই মিলে ঈদ উদযাপন করি। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার মজাই আলাদা। গত দুইবছর সেই আনন্দে ভাটা পড়েছিল। এবার কোন বিধিনিষেধ নেই, সবার সাথে ঈদ আনন্দ শেয়ার করতে গ্রামে যাচ্ছি।
ঈদ যাত্রায় বেশিরভাগ মানুষ বাস নির্ভর। অগ্রিম টিকেট বিক্রি হওয়াতে বাস কাউন্টারগুলোতে তেমন বড় ধরনের ভিড় নেই। আন্তঃজেলার বাসের মধ্যে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে। তাছাড়া ট্রেনের টিকেট নিয়ে আছে ভোগান্তি। বাস-ট্রেনের ভোগান্তি এড়াতে অনেকে মোটরসাইকেলযোগেও রওনা দিচ্ছেন বাড়িতে। অগ্রিম টিকেট না নেয়ায় কেউ কেউ গণপরিবহনে, ট্রাকে বা পণ্যবাহী যানেও বাড়ি ফিরছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ছোট যানবাহন মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের গতি কমিয়ে যানজট তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেবে। ঈদ যাত্রায় জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রিকশা, অটোরিকশা, ইজি বাইক ও নসিমন-করিমন চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মোট চারটি ঈদ কেটেছে করোনার বিধিনিষেধের মধ্যে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদযাত্রায় ছিল কড়াকড়ি। তারপরও অনেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় তা ছিল কম। এবার করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এবং বিধিনিষেধ না থাকায় বহু মানুষ ছুটছেন গ্রামে। ঈদে বাড়ির দিকে রওনা হওয়া জনস্রোতের বড় অংশ শহরের শ্রমজীবী মানুষ। ঈদের আগে নিজের সামর্থ অনুযায়ী প্রিয়জনদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে বাড়ি ফেরেন তারা।
রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আজম খান বলেন, শহর কর্মের জায়গা। কাজের জন্য শহরে থাকতে হয়। ছুটি পেলেই গ্রামে ছুটে যাই। করোনায় দুইবছর গ্রামেও ঈদের আমেজ ছিলো না। এবার কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় সবাইকে নিয়ে ঈদে দারুণ সময় কাটবে। ঈদ মানেই গ্রামীণ পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো, গ্রামে না গেলে ঈদ পূর্ণতা পায় না।
এদিকে ঈদে গ্রামে ফেরা কারো কারো কাছে মুক্তি ও স্বস্তির বিষয়ও। শব্দ ও বায়ুদূষণে শহর ছেড়ে গ্রামে কয়েকজনের স্বস্তির নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ এনে দিচ্ছে ঈদ। যানজট ও কোলাহলমুক্ত সবুজ গ্রামে কয়েকদিনের বিচরণ থাকবে শহরে সরু গলির ছোট ছোট বাসায় বাস করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষের। গ্রামে স্বস্তি খুঁজে নিবেন তারা।