তদন্ত না করে চাপে পড়ে বীমার টাকা দেবেন না

12

পূর্বদেশ ডেস্ক

ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বীমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যথাযথ তদন্ত না করে যে কোনো স্থানের বা প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অগ্নিকান্ডে কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বীমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও চাপের কাছে আপনারা মাথা নত করবেন না, দয়া করে। আমি বা আমাদের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের কাছে নানা ধরনের লোক আসে, তদবিরও করতে পারে সেক্ষেত্রেও আপনাদের দেখতে হবে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার দাবি করবে বড় একটা কিন্তু তার প্রকৃত ক্ষতি যাচাই-বাছাই করেই আপনারা অর্থ পরিশোধ করবেন। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সেটা কেন করা হয় না, তাহলে কি আমি মনে করবো যারা তদন্ত করতে আসে তারাও এর ভাগীদার। তাদেরও কোনো হাত আছে কি-না সেটাও তো আমার সন্দেহ হচ্ছে। সেটা আপনাদের দেখতে হবে।
বীমার অর্থ দাবির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে স্বার্থান্বেষী মহলের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়েও বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন আজকে এ কথা বলবেন, কারণ, তিনি যেহেতু এই পরিবারেরই একজন সদস্য (জাতির পিতাও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন) তাই এর বদনাম হোক তা তিনি চান না।
এক সময় তৈরি পোষাক কারখানাগুলোতে ঘন ঘন অগ্নিকান্ড ঘটার প্রসঙ্গ টেনে তদন্ত করে তিনি বীমার মোটা অংকের মিথ্যা অর্থ দাবির প্রমাণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। নাম উল্লেখ না করে কোন একটি কোম্পানির এক নারী কর্মীকে দিয়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্নিকান্ড ঘটানো হয় বলেও তদন্তে বেরিয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ঘন ঘন একটা জায়গায় আগুন লাগবে কেন? ইন্স্যুরেন্সের দাবিদার হয়ে যায়, টাকা পায়। সেক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি তাদের এ ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা দরকার। কতটুকু ক্ষতি হলো তার যথাযথভাবে তদন্ত হওয়া দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারো চাপে পড়ে কোন টাকা দিবেন না। তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগার ক্ষেত্রে ৪০ কোটি টাকার বীমা দাবিরও তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। একটি ফ্লাটে ৪০ কোটি টাকার কী সম্পদ থাকতে পারে, সে প্রশ্নও তোলেন এবং এর তদন্ত করাবেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।
কত সম্পদ একটা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে আছে যে তার ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হলো আর বীমা থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেল। অন্যদিকে যার ঘর সবচেয়ে বেশি পুড়লো তার বীমাও নাই, সে কিছুই পেল না। এসব বিষয়ে সকলকে একটু নজর দিতে হবে, বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বীমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তাই সরকার প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গত বছর একে ‘ক’ ক্যাটাগরি ভুক্ত দিবস হিসেবে উন্নীত করে।