তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন সমস্যা সমাধান করতে হবে

47

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এম.পি. চুয়েট ক্যাম্পাসে উক্ত নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
এ সময় বাংলাদেশ রেলপথ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম-০৬ আসনের সংসদ সদস্য এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী এম.পি. মহোদয় এবং চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় চুয়েট রোবটিকস ল্যাব এবং মোবাইল গেইম্স এন্ড অ্যাপ্স ডেভেলেপমেন্ট সেন্টারের উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় চুয়েট কাউন্সিল কক্ষে আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্প আয়োজিত চলমান ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্যারেড’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এম.পি.। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলপথ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম-০৬ আসনের সংসদ সদস্য এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী এম.পি., চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম মহোদয় এবং ইনকিউবেটর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ন-সচিব) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও ইনকিউবেটরের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এটিএম শাহজাহান। পরে সেমিনারে অংশগ্রহণকারী সকলকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী শপথ বাক্য পাঠ করান।
উল্লেখ্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে চুয়েটে ‘শখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ স্থাপন করা হচ্ছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চুয়েট ক্যাম্পাসে ৫ একর জমির উপর ১০ তলা ভবন বিশিষ্ট ইনকিউবেটরটি নির্মিত হচ্ছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে মধ্যে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনাইদ আহ্মেদ পলক এম.পি. বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন-নতুন সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমাদেরকে প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। সেক্ষেত্রে চুয়েটের এই মেগা-প্রজেক্ট শেখ কামাল আইটি বিজসেন ইনকিবেশন সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে আরো সম্মৃদ্ধ করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প ঘোষণা করেন। মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ লক্ষ থেকে বর্তমানে প্রায় ১০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী। আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে ৫-জি নেটওয়ার্ক চালু করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা পোস্ট শেয়ার অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেজন্য ডিজিটাল স্পেসকে নিরাপদ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু নিজে জেনে চুপ থাকলে হবে না। আশেপাশের সবাইকে সচেতন করতে হবে। কেননা একটা ফেইক নিউজের কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার ক্ষয়ক্ষতি থেকে আমি-আপনিও নিরাপদ থাকতে পারবো না।
চুয়েটকে দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী এম.পি. বলেন, চুয়েট হচ্ছে মানুষের ভবিষ্যত তৈরির কারিগর। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হচ্ছেন। চুয়েটে নির্মিতব্য আইটি ইনকিউবেটর তরুণদের জন্য একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। এই ইনকিউবেটরের জন্য আমি মাটি কাটতেও রাজী। এ সময় তিনি ফেসবুকে মানহানি ও অবমাননাকর ঘটনা বন্ধে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন।
চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর দেশবাসীর জন্য একটা ড্রিম প্রজেক্ট। এর মাধ্যমে দেশের আইটি সেক্টরের প্রত্যেকে উপকৃত হবেন। আইটি খাতে উদ্যোক্তা তৈরি ও বিভিন্ন সৃজনশীল আইডিয়াকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে এই ইনকিউবেটর একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন, ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর ২৬তম সভায় একনেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত¡াবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় চুয়েট ক্যাম্পাসে ১০ তলা ভবনের ৭ তলা পর্যন্ত ইনকিউবেশন ভবন তৈরি হবে। ৭ তলা ভবনটির প্রতি ফ্লোরে ৫ হাজার বর্গফুট করে মোট ৩৫ হাজার বর্গফুট স্পেস থাকবে। এছাড়া ৬ তলা ভিত্তিসহ ৪ তলা পর্যন্ত ২টি ডরমেটরি ভবন যার প্রতি ফ্লোরে ৫ হাজার করে দুটি ভবনে মোট ৪০ হাজার বর্গফুট এবং ৮ তলা ভিত্তির ৬ তলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন যার প্রতি ফ্লোরে ৬ হাজার বর্গফুট করে মোট ৩৬ হাজার বর্গফুট জায়গা থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশিয় আইটি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আইটি শিল্পে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুযোগ আরও অবারিত করার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে আশা করছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বিজ্ঞপ্তি