ঢাকায় ভবনে বিস্ফোরণ নিহত ৩, আহত ৪০

17

ঢাকা প্রতিনিধি

রাজধানীর সাযয়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। গতকাল রোববার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে ভবনটির তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা জীবন মিয়া জানান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পলাশী, ধানমন্ডি টহল এবং সিদ্দিকবাজার স্টেশনের চার ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহজাহান মোল্লা জানান, ভবনটির নাম শিরিন ভবন। বিস্ফোরণে তিনতলা ওই ভবনের একপাশের দেয়াল ধসে পড়ে।
আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া হয় কাছের পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক হোসেন।
নিহতরা হলেন, নরসিংদি জেলার বেলাবো উপজেলার বটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিকের ছেলে সাদিকুর রহমান তুষার (৩১), রাজবাড়ি সদর উপজেলার ধুলদি গ্রামের মৃত গোমেদ শেখের ছেলে সফিকুজ্জামান (৪৪) ও গাজিপুরের টঙ্গি কোনাপাড়া এলাকার মফিজউদ্দিন খলিফার ছেলে আব্দুল মান্নান (৬৩)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ জানান, নিহত তিনজন ওই ভবনের তৃতীয় তলায় লায়রা প্রোডাক্টসে কাজ করতেন। শফিকুজ্জামান ও তুষার সেখানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। আব্দুল মান্নান ছিলেন পিয়ন।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, ঠিক কী কারণে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছে গ্যাসের সিলিন্ডার বা এসি বিস্ফোরণে এই ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে বিস্ফোরণে নিহত তিনজনের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রাত ৯টার দিকে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ মরদেহগুলো মর্গে পাঠায়।
নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রমজান আলী জানান, রাতে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতাল থেকে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করা হয়। সোমবার (আজ) মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল জানিয়েছে, জমে থাকা গ্যাস থেকেই সায়েন্স ল্যাব এলাকার ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। গতকাল সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের ইনচার্জ রহমত উল্লাহ চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সুয়ারেজ লাইন বা কনসিল গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমায় এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
রহমত উল্লাহ চৌধুরী জানান, আমরা ডিটেক্টর দিয়ে ঘটনাস্থলে গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি। যখন বাতাসের সঙ্গে ৫-১২ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাস মিশে যায়, ওই স্থানে সুইস অন করলেও তৎক্ষণাৎ বিস্ফোরণ ঘটবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় কাপড়ের দোকানপাট, দ্বিতীয় তলায় সেলুন ও লন্ড্রির দোকান এবং তৃতীয় তলায় ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের অফিস। বিস্ফোরণের পর তৃতীয় তলার ওই অফিসের চেয়ার, দরজার শাটার ও আসবাবপত্রের কিছু সড়কে ছিটকে পড়ে।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আহত কবির হোসেন জানান, তিনি নিউ মার্কেটে একটি পোশাকের দোকানের সেলসম্যান। ওই ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয় আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ওই জটলার মধ্যে পড়ে তিনি আহত হন।
ঘটনাস্থলের পাশে প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের তৃতীয় তলায় একটি টেইলারিং শপের মালিক মিনার হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে একটি বস্তু উড়ে এসে আমাদের দোকানের গøাসে লাগে। গøাস ভেঙে দোকানে থাকা নান্নু ও মো. হোসেন নামে আমাদের দুই কর্মচারী আহত হয়েছেন। এছাড়া পাশের দোকানের জিল্লুর নামে এক কর্মচারী আহত হন।

হাসপাতলে যারা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ঢাকা মেডিকেল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে ১৪ জনকে। তাদের মধ্যে একজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটে ভর্তি আছেন নুর নবী (২৩), আকবর আলী (৫২), আশরাফুজামান (৩৬), আশা (২৫), হাবিবুর রহমান (৩২), জহুর আলী (৫২)।
ইনস্টিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমাদের এখানে ভর্তি ৬ জনের মধ্যে কয়েক জনের ইনহেশন বার্ন রয়েছে, এছাড়া কয়েকজন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।”
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন জাকির হোসেন জুয়েল (৩৫), মেহেদী হাসান (২৫), তাজ উদ্দিন (৩০), কবির হোসেন (৩০), রাবেয়া খাতুন (২৫), নুর নবী (২৪), অজ্ঞাত (৪০), কামাল হোসেন (৪০)। তাদের বেশিরভাগই পথচারী কিংবা দোকান কর্মচারী।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, এই আটজনের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের অধিকাংশই নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। এদের হেড ইনজুরিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইনজুরি রয়েছে।