ঢাকায় নেমেছে ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার

32

এখন থেকে পথেই পরীক্ষা করে জানা যাবে খাবারে কি পরিমাণ রাসায়নিক আছে কিংবা ফলমূলে কি পরিমাণ কীটনাশকের উপস্থিতি আছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত একটি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি দিয়েছে সরকারের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে। এই গাড়িতেই মশলা, ফলমূল ও শাকসবজি, পানি, পথের খাবার (স্ট্রিট ফুড)- এই চার ক্যাটাগরির খাদ্য ও খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা যাবে বলে জানিয়েছে এফএও। গতকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে এই গাড়ি ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান।
গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের প্রথম এই মোবাইল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি হস্তান্তর করে এফএও। সংস্থাটি জানায়, আধুনিক এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি বিভিন্ন মার্কেটে প্রদর্শন করিয়ে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতার ক্যাম্পেইন করা যাবে। এই গাড়িতে খাদ্যে ব্যবহৃত ক্ষতিকর পদার্থ, রাসায়নিক, ভারী ধাতু, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, ই-কোলাই, সালমোনেলা, শিগেলা এবং ফরমালডিহাইড নির্ণয় করার মতো যন্ত্র সংযোজন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে সরাসরি বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
এফএও আরও জানায়, ভ্রাম্যমাণ এই ল্যাবরেটরিতে চার ক্যাটাগরির খাবারের মধ্যে মশলায় ভারী ধাতুর ব্যবহার (যেমন- হলুদে সিসা), ফলমূল ও শাকসবজিতে কীটনাশকের পরিমাণ, পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া এবং পথের খাবারে সালমোনেলা শনাক্ত করা যাবে। এছাড়া কিছু সাধারণ ক্ষতিকর মিশ্রণ ও কৃত্রিম রংয়ের ব্যবহারও শনাক্ত করা যাবে। এই গাড়ির ভেতরেই তিনজন টেকনিশিয়ান একসঙ্গে বসে দফায় দফায় পরীক্ষা করতে পারবেন। নির্দিষ্ট পরীক্ষাগুলোর ফল কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাবে। যদিও এই যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বড় বড় ল্যাবরেটরির মতো বিশদ বিশ্লেষণ করা না গেলেও উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে ভেজাল শনাক্তে সক্ষম। শিক্ষামূলক প্রচারণার জন্য এই গাড়িতে একটি স্ক্রিন যুক্ত করা হয়েছে।
ইউএসএইড এর অর্থায়নে ও এফএও’র সহায়তায় এই ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারটি পেয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খবর বাংলা ট্রিবিউনের

এফএও আরও জানায়, হলুদে সিসার মতো ধাতব পদার্থ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি লোপসহ বন্ধ্যাত্বের মতো রোগের সৃষ্টি হতে পারে। শাকসবজি ও ফলমূলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে সাধারণ রোগ যেমন হতে পারে, তেমনই ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য রোগেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়ার কারণে শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া হতে পারে এবং পথের খাবারে সালমোনেলা পাকস্থলির সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ এই ল্যাবরেটরি প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, জনগণকে সচেতন করার জন্য ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার অত্যন্ত যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ। ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াবে এবং খাবার নিরাপদ বা অনিরাপদ কিনা, তা পরীক্ষা করবে। এ ছাড়া দূষণ ও ভেজালের বিভিন্ন উৎস সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন করবে এবং কিভাবে আমরা আমাদের খাদ্য নিরাপদ রাখতে পারি তাও প্রদর্শন করবে। তিনি প্রতিটি জেলায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আরও ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান।
জানা গেছে, খাদ্যে কীটনাশক ও রাসায়নিক পরীক্ষার এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি ভ্যানের দাম আনুমানিক ৬০ লাখ টাকা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, আমাদের অনেক দিন থেকেই এই ল্যাবরেটরির দরকার ছিল। এক সময় ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার সময় আমাদের হাতের কাছে কোনো টেস্ট কিট ছিল না। এখন যদিও আছে তবে পর্যাপ্ত না। হাতে করে ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়ে যেতে পারছেন না সবসময়। কিটগুলো কিনতেও আবার ভালো রকমের বাজেটের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এই মোবাইল ল্যাবরেটরি বেশ ভালো একটা কাজ দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অ্যানালিস্ট থাকবেন গাড়িতে। কোনো ফুড আইটেমে যদি হেভি মেটাল থাকে বা ফরমালিন থাকে সেটা জায়গায় বসেই পরীক্ষা করে বের করা যাবে। টেস্টের ফলে যদি দেখা যায় আমাদের গ্রহণযোগ্য মাত্রার বেশি আছে তাহলে সেই উৎপাদনকারী কিংবা ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হবে অথবা জেল-জরিমানা করা হবে।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দিন ভ্রাম্যমাণ এই ল্যাবরেটরি নিয়ে রাজধানীর কাওরান বাজারে অভিযান চালিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শান্তনু চৌধুরী। তিনি বলেন, আজকে আমরা প্রথমবারের মতো ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার দিয়ে পরীক্ষা চালাই। কাওরান বাজারে প্রায় ১০টি দোকানের মাছের স্যাম্পল নেই। তারপর আমাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেছি বিষাক্ত কোনো কিছু আছে কিনা। আমাদের পরীক্ষায় সেখানে আমরা তেমন কিছু পাইনি। বিষাক্ত দ্রব্য, ব্যাকটেরিয়া, ফুড কালারসহ নানা পরীক্ষার সুযোগ আছে আমাদের এই ল্যাবরেটরিতে। তাতে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো একটা ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের এই কার্যক্রম এখন থেকে প্রতিদিনই চলবে।