ঢাকায় এসে মুজিবের সাথে আলোচনার প্রস্তাব ভুট্টোর

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরে বাঙালির জাতির মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা লগ্নে পাকিস্তান জাস্টিস পার্টির নেতা এয়ার মার্শাল আজগর খান ঢাকা সফর শেষে পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে এক সমাবেশে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান যদি স্বাধীন হয়ে যায়, তাহলে পাকিস্তানের বাকি অংশের অস্তিত্ব পাঁচ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ কথা বলার পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো একটি গোপন টেলিগ্রাম বার্তা। বার্তায় বলা হয়, শান্তির সুযোগ বাড়লেও সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ঢাকার পরিস্থিতির ব্যাপারে আমরা বিশ্লেষকদের মতামতের সাথে একমত। সংকট অব্যাহত রয়েছে। সামরিক আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে মুজিবের দাবির ব্যাপারে সামরিক বাহিনী এখনও কোনো জবাব দেয়নি। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহŸান এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে। ইয়াহিয়া খান ঢাকা না যাওয়া এবং মুজিবের সাথে দেখা না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে সামরিক আইন প্রশাসকের কাছ থেকে কোন জবাব পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বার্তায় আরও বলা হয়, পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতার বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে করে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি বেয়নেটের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানেরও ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা জানি না, শেষ পর্যন্ত আবেগ না যুক্তি জয়ী হবে।
এতে বলা হয়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভুট্টোর ভাল ব্যবহার দরকার। কারণ বর্তমান সংকট সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানে তার অস্বীকৃতির কারণে। ১০ মার্চ মুজিবের কাছে ভুট্টো যে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন তা আমরা পড়েছি। তাতে ভুট্টো ঢাকায় আসা এবং মুজিবের সাথে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টি সামরিক শাসন অবসানে আওয়ামী লীগের দাবির সঙ্গে অংশীদার হতে চায়। ১৪ মার্চ করাচিতে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় ভুট্টো এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন দূতাবাসের বার্তায় আরও বলা হয়, আমাদের মনে হয় সেনাবাহিনী এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে। সেনাবাহিনী সম্ভবত আনুষ্ঠানিক বিচ্ছিন্নতার দিকে দেশকে নিয়ে যাবে। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের জনমত হচ্ছে কনফেডারেশন প্রস্তাবের পক্ষে, যা ভাঙনের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে পারবে। ভুট্টো এই প্রস্তাব আংশিকভাবে গ্রহণ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই কনফেডারেশনের আওতায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে পৃথক সশস্ত্র বাহিনী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব রয়েছে। এই প্রস্তাব মুজিবের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এতে পাকিস্তানের ঐক্য নামে মাত্র থাকবে। তবে এর সবকিছুই অনুমাননির্ভর ধারণা। ব্যক্তিগত যোগাযোগের পর এসব ধারণার অনেকগুলোই পরিবর্তন হতে পারে।