ঢাকার ঐশী থেকে পটিয়ার মাঈনুল : প্রাপ্ত বার্তাটি আমরা গ্রহণ করছি তো ?

81

মুহাম্মদ আরিফ খান

মাদকাসক্ত মেয়ে ঐশী রহমানের হাতে নিজ বাসায় খুন হন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পলিটিক্যাল শাখার পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান। ঘটনা,২০১৩ সালের রাজধানীর চামেলীবাগের। বাবা-মাকে খুন করার অভিযোগে মেয়ে এখন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ঐশী ছয় পাতার ৬০টি ঘুমের ট্যাবলেট কেনে। ৩০টি করে ট্যাবলেট সে মা-বাবার কফিতে মেশায়। মা-বাবা কফি খাওয়ার পর অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর সে প্রথমে বাবাকে এবং পরে মাকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মূলত মাদক সেবন এবং তার অবাধ চলাফেরায় মা-বাবা বাধা দেওয়ার কারণেই সে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছিলো। ১৭ বছর বয়সী ঐশী ছিলো অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও পরে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্রী।
মাদকাসক্ত ছেলে মাঈনুলের হাতে নিজ বাসায় খুন হন জাপা নেতা ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র সামশুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতার। ঘটনা, ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ার। মাকে খুন করার অভিযোগে ছেলে এখন হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মা ও বোনের সাথে ঝগড়া হলে মাইনুল প্রথমে কোমর থেকে পিস্তল বের করে তার বোনকে লক্ষ্য করে গুলি করে। সে গুলিটি অবিস্ফোরিত হলে পরে মা জেসমিন আক্তারকে লক্ষ্য করে গুলি করলে গুলিটি তার মায়ের চোখের নিচ দিয়ে ভেদ করে বের হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মুলত, মাদকাসক্ত ও উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্থ হওয়ায় মাঈনুলের বাবারও তার ওপর ভরসা ছিল না। তার নামে তাই আগে থেকেই পৈতৃক সম্পত্তি কম ছিল। মাইনুল সন্দেহ করেছিল তার বাবার সব সম্পত্তি তার মা দুই ভাই-বোনকে দিয়ে তাদের সাথে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। তাই মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই সে হত্যাকাÐটি ঘটিয়েছিলো।
বার্তা : ভালো ও সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে উঠে আসা দুজনের পরিণতি অনেকাংশেই একই। একজন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার (ইন্সপেক্টর) মেয়ে এবং অপরজন একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধির (মেয়র) ছেলে। দুজনই সুশিক্ষিত এবং নব তারুণ্যে উদ্দীপ্ত। ছিলোনা অভাব অনটন কিংবা দেখতে হয়নি জীবনের ঘাত প্রতিঘাতগুলোও। তবুও কেন এমনটা হলো? কীসের অভাবে হলো? বলা হয়ে থাকে- ‘সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’
এদের দু’জনের ক্ষেত্রেই হয়েছে এমনই। খারাপ সঙ্গ দুজনকেই আজ জীবনের এ পর্যায়ে টেনে নিয়ে এসেছে। খারাপ সঙ্গের ফলে হাতে খড়ি হয়েছে মাদকের, আর মাদক তাদের জীবনকে করেছে উচ্ছৃংখল। ফলে জীবন হয়েছে বিপন্ন। যদি পরিবারের সাথে তাদের বন্ধন অটুট রাখা যেতো, করা যেতো পজিটিভ প্যারেন্টিং তাহলে হয়তো মেয়ের হাতে বাবা-মা কিংবা ছেলের হাতেই মায়ের খুন হয়ে যাওয়ার মতো এ দৃশ্যগুলো দেখতে হতোনা আমাদের।
তাই আমাদের তরুণ সমাজকে বলবো- সঙ্গ দোষে, লোহাও ভাসে। বৃষ্টির পানি পরিস্কার পাত্রে রাখলে তা সুপেয় হয়। নর্দামায় পড়লে, তা পান তো দূরের কথা পা দোয়ার উপযুক্ততা ও হারিয়ে ফেলে। পদ্ম পাতার উপর পড়লে, তা মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করে। আর ঝিনুকের উপর পড়লে, তা খোদ মুক্তাতেই পরিণত হয়। পানি কিন্তু এক্টাই। তবুও তার সঙ্গীর কারনে এতোতা পার্থক্য হয়। অতএব পানি হয়ে কিসের উপর পড়বেন সে সিদ্ধান্ত একান্ত আপনারই। অতএব ভালো মানুষের সাথে চলার চেষ্টা করুন আপনি নিজেও ভালো থাকতে পারবেন, ভালো রাখতে পারবেন পরিবার, সমাজ, দেশকে ও।
আর অভিভাবকদের বলবো- আসুন, শিক্ষা নিই এখান থেকেই। দৃষ্টি দিই নিজ পরিবারের দিকে। সন্তানদের মোবাইল/ স্ক্রীন আসক্তি সহ সবধরনের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখার জন্য তাদেরকে কোয়ালিটি টাইম দিই। সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি নিজেই হওয়ার চেষ্টা করি। তাহলেই ভালো থাকবে আমাদের সন্তানেরা, ভালো থাকবে আমাদের পরিবার গুলো। পরিবর্তন সাধিত হবে সমাজ তথা দেশের।
লেখক : ব্যাংকার ও ডিজিটাল মার্কেটার