ড. সুশীল কুমার দে

2

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি ১৮৯০ সালে ২৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল সতীশচন্দ্র। ডাক্তার পিতার কর্মক্ষেত্র কটকের র‌্যাভেন শ কলেজিয়েট স্কুল’ থেকে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করেন ১৯০৫ সালে। অতঃপর কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯০৭ সালে এফ.এ বা র্ফাস্ট আর্টস পরীক্ষায় পাস করেন এবং বৃত্তি পান। এ কলেজ থেকেই ১৯০৯ সালে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স ও বৃত্তিসহ বি.এ; ১৯১১ সালে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণীতে এম.এ পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক ও পুরস্কার পান। পরের বছর অর্থাৎ ১৯১২ সালে বি.এল পাশ করেন। ৩ বছর পর ১৯১২ সালে পূর্বে অধ্যয়নকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেসিডেন্সী কলেজেই ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সুশীল কুমার দে। পরবর্তীতে ১৯১৩ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি, ভারতীয় ভাষা এবং সংস্কৃতের লেকচারার ছিলেন তিনি। এরপর ১৯২৩ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির রীডার ও ক্রমে সংস্কৃতের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৪৭ সালে শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নেন সুশীল কুমার দে। এর মধ্যেই ইউরোপে গিয়ে লন্ডন স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজে সংস্কৃত অলঙ্কার সাহিত্যের ইতিহাসের অভিসন্দর্ভের জন্য ‘ডি.লিট’ উপাধি পান। ‘বন ইউনিভার্সিটিতে’ ভাষাতত্ত¡ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং পুস্তক-সম্পাদনার পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। এরপর ঢাকায় ফিরে গিয়ে শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি পুঁথি সংগ্রহ করা তাঁর অন্য কাজ ছিল। সরকারের সাহায্যে মাত্র ১০ হাজার টাকায় তিনি ২০ হাজার পুঁথি সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে তাঁর এই সংগ্রহশালা ২৫ হাজারে উঠেছিল। সংগৃহীত ৯ হাজারের বেশি বাংলা প্রবাদ অর্থসহ সঙ্কলন করেছিলেন সুশীল কুমার দে।
বিভিন্ন ভাষায় তাঁর শতাধিক প্রবন্ধ আছে। রচিত বাংলা ৯টি গ্রন্থের মধ্যে ৬টি কাব্যগ্রন্থ। এছাড়াও, ৮টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। তাঁর রচিত ৫টি ইংরেজি রচনা হচ্ছে – কাব্যলীলায়তা (১৯৩৪), প্রাকতনী (১৩৪১), অদ্যতনী (১৩৪৮), ক্ষণদীপিকা (১৩৫৫), সায়ন্তনী (১৩৬১), বাংলা প্রবাদ (১৩৫২), নানা নিবন্ধ (১৩৬০)। এছাড়াও ‘দীনবন্ধু মিত্র’ (১৩৫৮) তাঁর রচিত একটি উল্লেখযোগ্য জীবনী গ্রন্থ।
পুনার ভাÐারকর রিসার্চ ইন্‌স্টিটিউটের উদ্যোগে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মনীষীগণের সহায়তায় বিরাট মহাভারতের সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এতে তিনি উদ্যোগপর্ব সম্পাদন করেছিলেন। এছাড়াও, দ্রোণপর্বের কাজেও হাত দিয়েছিলেন তিনি। বাঙলা সরকারের প্রধান গবেষক ছিলেন তিনি। অবসর গ্রহণের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন সুশীল কুমার দে। এছাড়াও, পুনার ডেকান রিসার্ট ইন্‌স্টিটিউটের ইতিহাসভিত্তিক সংস্কৃত অভিধান রচনায় সম্পাদকমÐলীর সভাপতি ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং লেক্‌চারার ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ড. দে। ১৯৫০ এবং ১৯৫৬ সালে- দু’বার এর সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
পুরস্কার ও সম্মাননা- সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বহু সম্মান পেয়েছেন। তন্মধ্যে- ১৯১৫ সালে গ্রিফিথ পুরস্কার এবং ১৯১৭ সালে পি.আর.এস উপাধি লাভ অন্যতম। সূত্র: বাংলাপিডিয়া