ডোপ টেস্ট সনদ ছাড়া মিলছে না লাইসেন্স

79

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে পেশাদার গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্টের সনদ লাগছে। এ সনদ ছাড়া চালকরা নতুন লাইসেন্স ও পুরনো লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না। এজন্য পেশাদার চালকরা বিআরটিএ কার্যালয় থেকে টেস্টের আবেদন ইস্যু করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে ডোপ টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে পরবর্তী কার্যক্রম করা সম্ভব হচ্ছে। তবে অপেশাদার লাইসেন্সধারীদের ডোপ টেস্ট সনদের প্রয়োজন নেই।
গত রবিবার থেকে নতুন এ নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের আবেদনপত্রের সঙ্গে ডোপ টেস্টের সনদ বিআরটিএতে জমা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গেলে ডোপ টেস্ট সনদ ইস্যু ও রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি ডোপ টেস্ট বিষয়ক এক পরিপত্রে বলা হয়, ডোপ টেস্ট পজিটিভ (মাদক সেবনের আলামত) হয় বা তাতে বিরূপ মন্তব্য থাকে তাহলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না। ডোপ টেস্ট সারাদেশে সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্রে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে করা যাবে। তবে চট্টগ্রাম বিআরটিএ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করার জন্য পত্র প্রেরণ করা হচ্ছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ১৪৭টি আবেদন ইস্যু হয়েছে। এসব আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২ জনের রিপোর্ট বিআরটিএ কার্যালয়ে ইতোমধ্যে চলে এসেছে। এতে ২১ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও মাত্র একজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এতে রিপোর্ট পজিটিভ আসা ব্যক্তিটি লাইসেন্স পাবেন না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, যার ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে। তিনি আপাতত লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মনোনীত হবেন না। উনার প্রতি পরামর্শ হচ্ছে- তিনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেন। তার এক-দেড় মাস পর সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় উনার আবেদন আমরা পুনরায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরাবর ইস্যু করব। তখন যদি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তবে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য তিনি মনোনীত হবেন। রিপোর্ট নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত তিনি কোনভাবেই লাইসেন্স পাবেন না, এরকম নির্দেশনা আমাদের দেয়া হয়েছে।
কেউ যদি সনদ জাল করে দাখিল করে, তবে করণীয় কি এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আবেদন ইস্যু করার পর আবেদনকারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরাসরি ডোপ টেস্টে অংশগ্রহণ করবেন। টেস্টের রিপোর্টটি তিনি হাতে করে অফিসে নিয়ে আসবেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিপোর্টের একটি কপি আমাদেরকে মেইলে পাঠিয়ে দিবেন। আবেদনকারীর হাতে আনা কপি ও মেইলের কপি আমরা মিলিয়ে দেখি। তারপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত আবেদনকারীকে জানিয়ে দিই।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী পূর্বদেশকে বলেন, যারা পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসবে তাদের ডোপ টেস্টের সনদ বাধ্যতামূলক। আবেদনকারীরা বিআরটিএ কার্যালয় থেকে টেস্টের আবেদন নিয়ে হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে রিপোর্ট নিয়ে আসবেন। গত রবিবার থেকে ডোপ টেস্টের বিষয়টি কার্যকর হয়েছে। এটা নিশ্চিত করা হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার গত ১২ জানুয়ারি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব বিভাগীয় ও সার্কেল কর্মকর্তাদের একটি পরিপত্র পাঠান। বিআরটিএ চেয়ারম্যানের পাঠানো পরিপত্রে বলা হয়েছে, যারা মাদকাসক্ত নন, তারাই কেবল পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে অপেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক নয়। বাণিজ্যিক পরিবহন, ভাড়ায় চালিত গাড়ি অথবা সরকারি বাহনের চালক হিসেবে কাজ করতে হলে পেশাদার লাইসেন্স থাকা আবশ্যক।
যাত্রীরা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। রাতের বেলায় অনেক চালকরা মদ্যপান করে গাড়ি চালান। তারা মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং দুর্ঘটনায় পতিত হন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানীও ঘটে। তবে ডোপ টেস্টের ফলে মাদকাসক্ত চালকরা আর লাইসেন্স পাবেন না। ফলে যাত্রী ও পণ্য অনেকটা নিরাপদ থাকবে।
উল্লেখ্য, পরিবহন চালকদের মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনাই এবার বাস্তবায়িত হয়েছে।