ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই বাড়তি সতর্কতা কাম্য

31

জুলাইতে শুরু হওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগেও কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ ডেঙ্গুর বাড়তি সতর্কতা হিসাবে দেশের সিটি কর্পোরেশনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকল চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটিও বাতিল করা হয়। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে এ বন্ধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে বাই রুটেশন দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর আক্রান্তের হারে এখনও তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত বৃহস্পতিবার সরকারি এক হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭ শতাধিক রোগী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, শ্রাবণ মাস যেহেতু শেষ তাই বৃষ্টি কমে আসবে সেইসাথে এডিশ মশার বিস্তারও কমবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত হল আগামী সেপ্টেম্বর পুরোটাই এ রোগের প্রকোপ থাকতে পারে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারকে আরো নতুন ভাবনা ও উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এটি সাময়িক কোন রোগ নয়, যেহেতু এটি এডিশ মশাবাহিত রোগ তাই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় এডিম মশার লাভা ধ্বংস করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। এ ক্ষেত্রে শুধু সিটি কর্পোরেশন নয়, বরং পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঈদের আগে থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবারও। এ অবস্থা আরো অন্তত দুই বা তিনদিন থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এর ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বেড়ে চলছে। সুতরাং ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।
আমাদের সমস্যা হল, যখন মাথাব্যথা হয়, তখন মাথাব্যথার ওষুধ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়া এবং অনেক মানুষের প্রাণহানির পর মশক নিধনের কীটনাশক কেনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকাসহ সবকটি সিটি কর্পোরেশন। অথচ তাদের প্রধানতম কাজটিই হল মশক নিধন ও নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মানসম্মত কীটনাশকের অভাব এবং নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালু না রাখার কারণেই বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঈদের ছুটির সময়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে চিন্তিত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাস্তবেই তাই হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের উচিত হবে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণে যেন কোনো ধরনের হেলাফেলা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।
ঢাকা বা চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সেটি বলার সুযোগ নেই। আগস্ট মাসের প্রথম তিন দিনে ঢাকায় যেখানে ৫ হাজার ৮৪ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, বাইরে সেখানে এ সংখ্যা ২ হাজার ৩৮১। জানুয়ারি থেকে সরকারি হিসাবে ২২ হাজার ৯১৯ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ হাজার ৪৭। চিকিৎসাধীন আছেন ৬ হাজার ৮৫৮। মারা গেছেন ২১জন। যদিও এ সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।
দেশের প্রধান নগরীর বাইরে বড় সমস্যা হল ডেঙ্গুর চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নেই প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান। এ অবস্থায় ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া আমরা একটি বিষয় লক্ষ করে আসছি, একসময় শহর বা মফস্বলে তরুণ ও যুবকরা সংঘবদ্ধ হয়ে রাস্তাঘাট, পুকুর, দিঘি, জলাশয়গুলো পরিষ্কার করত, ফলে মশাবাহিত রোগেরও তেমন বিস্তার ঘটতনা। এখন ডেঙ্গুর ভয়াবহ অবস্থা জানার পরও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আহবান জানানো সত্তে¡ও এ জাতীয় কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। এটি আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে চরম অবহেলার দৃষ্টান্তই বটে। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের সমাজকল্যাণ ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিলে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থামাতে কিছুটা হলেও কাজ দিবে।