ডিসেম্বরে সড়কে নিহত ৪১৮ জন, আহত ৪৯৭

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

গেলো ডিসেম্বর মাসে দেশে ৩৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৮ জন নিহত ও ৪৯৭ জন আহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে ৬৩ জন নারী ও ৪৯ জন শিশু। এরমধ্যে ১৬৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৭৮ জন। যা মোট নিহতের ৪২.৫৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩.৬০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৩০.৩৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৯ জন, অর্থাৎ ১৬.৫০ শতাংশ।
গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংগঠনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করেছে প্রতিবেদনটি।
এই সময়ে ৩টি নৌ-যান ডুবির দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং ৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪৯ জন নিহত, ৩৪ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন এবং অজ্ঞাত সংখ্যক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। ১৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৭৮ জন (৪২.৫৮%),বাস যাত্রী ১১ জন (২.৬৩%), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি যাত্রী ১৮ জন (৪.৩০%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ১২ জন (২.৮৭%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-হিউম্যান হলার) ৪৫ জন (১০.৭৬%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা-টমটম) ১৬ জন (৩.৮২%) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ১১ জন (২.৬৩%) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরণ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৪৯টি (৩৮.৯০%) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৪টি (৩২.৩৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৭টি (১৭.৪৯%) গ্রামীণ সড়কে, ৩৯টি (১০.১৮%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (১.০৪%) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ
দুর্ঘটনাগুলোর ৫৮টি (১৫.১৪%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২৯টি (৩৩.৬৮%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৩টি (৩২.১১%) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৬২টি (১৬.১৮%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২.৮৭%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৪.৪৭ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক ৫.৭৯ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৩.৩৮ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২.২৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-হিউম্যান হলার) ১৪.৬৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা-টমটম) ৭.৭২ শতাংশ এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল ২.০৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ১.৬১ শতাংশ (লং ভেহিকেল, কন্টেইনার লরি, তেলবাহী ট্যাংকার, রোড কাটার রুলার মেশিন গাড়ি, ভেম্পার, সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি ও গরুর গাড়ি)।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬২১টি। এরমধ্যে ট্রাক ১০৭, বাস ৭৬, কাভার্ডভ্যান ২৪, পিকআপ ২১, ট্রলি ১৬, লরি ৫, ট্রাক্টর ৯, ড্রামট্রাক ৬, মাইক্রোবাস ১১, প্রাইভেটকার ৭, অ্যাম্বুলেন্স ৩, মোটরসাইকেল ১৭৪, থ্রি-হুইলার ৯১ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-হিউম্যান হলার), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৮ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা-টমটম) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল-গরুর গাড়ি ১৩টি, অন্যান্য ১০টি (লং ভেহিকেল ১, কন্টেইনার লরি ২, তেলবাহী ট্যাংকার ২, রোড কাটার রুলার মেশিন গাড়ি ১, ভেম্পার ২, সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি ১ ও গরুর গাড়ি ১টি)।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৪.৬৯%, সকালে ৩৪.৯৮%, দুপুরে ১৫.১৪%, বিকালে ১৮.৫৩%, সন্ধ্যায় ৬% এবং রাতে ২০.৬২%।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের

দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ
সড়কে দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা।