ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন চায় না বিএনপি

20

এম এ হোসাইন

বরাবরই থানা কমিটি গঠনের উদ্যোগে হোঁচট খায় নগর বিএনপি। সুপার ফাইভ, পর্যালোচনা কমিটি করেও থানা কমিটি গঠন করতে না পেরে শেষে এসে কর্মিসভার মাধ্যমে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। টাইম ফ্রেম নির্ধারণ করে মাঠে নেমে নগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি সার্থকতাও পেয়েছে। ১৫ থানার ১৪টিতে সম্পন্ন করেছে কর্মিসভা। এরই মধ্যে নগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্যরা জরুরি সভা করে ডিসেম্বরের আগে সব ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল নগর বিএনপির ৩৯ সদস্যের আহব্বায়ক কমিটির সদস্যরা হঠাৎ জরুরি সভায় মিলিত হন। সেখানে আল্টিমেটাম দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে সকল কমিটি গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। একমাসের মধ্যে থানা কমিটির সাথে আলোচনার মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি এবং পরবর্তীতে সম্মেলনের মাধ্যমে নগর বিএনপির কমিটি গঠনের প্রস্তুতির যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য একযোগে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয় সভায়।
যদিও ঘর গোছানোর কাজে নগর বিএনপির শাহাদাত-বক্করের আহব্বায়ক কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই হাত দেয়। উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৫টি থানা কমিটি গঠনের। এজন্য নগর কমিটির আহব্বায়ক, সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহব্বায়কদের প্রধান করে ১৫টি পর্যালোচনা কমিটি করা হয়। আগের থানা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসব কমিটিকে। কিন্তু পর্যালোচনা কমিটি কাজ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েন। এরই মধ্যে করোনার প্রভাবও বাড়তে থাকে। ফলে তারাও কোন থানাতে নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি। বহাল রাখে পুরাতন কমিটিগুলো। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় আবার থানাভিত্তিক কর্মিসভার মধ্যমে ওয়ার্ড ও থানা পুনর্গঠনের কাজ হাত দেয়। একমাসের মধ্যে থানাভিত্তিক সভার তারিখ নির্ধারণে মাঠে নামে বিএনপি। প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও কর্মিসভার মাধ্যমে সংগঠন গোছানোর কাজ কতটা সম্পন্ন করতে পেরেছে সেটা এখনো পরিস্কার নয়। এ অবস্থার মধ্যে আহব্বায়ক কমিটির সদস্যরা জরুরি সভার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে আল্টিমেটাম দিয়ে মাঠে নামছে।
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘আমরা কর্মিসভা প্রায় শেষ করেছি। আগামী একমাসের মধ্যে ওয়ার্ড থানা কমিটি গঠনের চিন্তা করছি। আহব্বায়ক কমিটির সভা করেছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওয়ার্ড, থানা কমিটি করে সম্মেলন হবে। ওয়ার্ড, থানার নতুন কমিটি হলে আগের কমিটি এমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহব্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নগরের আওতাধীন ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে নগর বিএনপি। ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের আহব্বায়ক, সদস্যসচিব ও ১৩ জন যুগ্ম আহব্বায়কের সমন্বয়ে ১৫টি থানায় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। তারও আগে ২০১৯ সালে নগর বিএনপির পক্ষ থেকে থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল নগর কমিটি। তখনও কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়। এদিকে তিনমাসের জন্য গঠন করা নগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি ইতোমধ্যে ৮ মাস অতিবাহিত করেছে। তবে এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাছাড়া দলীয় কার্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কারাভোগ করেছেন নগর বিএনপির আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। সিনিয়র নেতারা প্রায় সবাই মামলার আসামি হন। সাংগঠনিক কাজে নেমে আসে স্থবিরতা। সেই স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে নগর বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে কর্মিসভার মাধ্যমে দলের কর্মিদের মধ্যে নতুন উদ্যম ফিরছে।