ডিসেম্বরের মধ্যে গাড়ি চলাচলের উপযোগী হবে পিসি রোড

88

ওয়াসিম আহমেদ

দেশের অর্থনীতির সূতিকাগার বন্দরের সংযোগ সড়ক পিসি রোডের দুর্ভোগের কথা সবার জানা। ছয় কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে পার হয়েছে সাড়ে তিন বছর। ফলে বন্দরমুখি যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুইপাশে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির হিসাব কষছেন। এর মধ্যে কাজ অসমাপ্ত রেখে পালিয়েছেন দুই ঠিকাদার। তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন ঠিকাদার দিয়ে কাজ শেষের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন।
সাগরিকা মোড় থেকে কলকা সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত সড়কে পূর্বপাশে কার্পেটিং রয়েছে। এর থেকে পরের দেড় কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। ছোট পুকুর সমান গর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। ধুলো আর গর্তে জমে থাকা পানিতে পথচারীর দুর্ভোগ চরমে। সড়কের দুইপাশের ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়েছেন। অনেকে ক্ষতির হিসাব গুনে গুনে দিন পার করছেন। এমন অনিশ্চয়তার মাঝে দেখা যাচ্ছে আলোর মুখ, পিসি রোড়ে শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন।
পোর্ট কানেক্টিং রোডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আনোয়ার জাহান পূর্বদেশকে জানান, আগের ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাওয়ার পর নতুন করে টেন্ডার আহব্বান করে সিটি করপোরেশন। তিনটি লটের দুইটি লট তাহের ব্রাদার্স এবং অপরটি হোসাইন এন্ড ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। আমাদের নিয়মিত মনিটরিং রয়েছে। মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। পরে মাসদুয়েক সময় লাগবে সৌন্দর্যবর্ধন ও অন্যান্য কাজগুলো সমাপ্ত করতে।
তিনি আরও জানান, ৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত ছিল। অর্থাৎ ওইটুক সড়কে শতভাগ কাজ হয়নি। নতুন ঠিকাদাররা সেখানে কাজ করছেন। তবে নয়াবাজার মোড় থেকে কলকা সিএনজি স্টেশন পর্যন্ত সড়কটিতে কার্পেটিং করা সম্ভব হয়নি। ওই জায়গায় দুর্ভোগ একটু বেশি। আমরা দ্রুত কাজ করছি। বৃষ্টির কারণে কার্পেটিং করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।চসিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৫ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটির কাজ (নিমতলা-অলঙ্কার মোড়) শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয়েছে। সাতে ব্যয়ও বেড়েছে। কাজ শেষ না করে চলে যায় মঞ্জুরুল আলম কনস্ট্রাকশন (ম্যাক), রানা বিল্ডার্স ও রানা বিল্ডার্স লিমিটেড-সালেহ আহমেদ (জেভি) নামের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুইটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করে সিটি করপোরেশন। জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ‘সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্প’র আওতায় সড়কটির সংস্কার কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর কাজের উদ্বোধন করেন।
গত ২৭ জুন চসিকের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে পিসি (পোর্ট কানেক্টিং) রোডের কাজ। এসময় মেয়র রেজাউল বলেন, ‘পোর্ট কানেকক্টিং রোডের ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহব্বান করা হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ শেষ করা হবে।’
গতকাল পূর্বদেশকে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কঠোরভাবে ঠিকাদারের কাজ মনিটরিং করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে কাজ শেষ করতে না পারলে অ্যাকশনে যাব। দ্রুত কাজ চলছে। দ্রুত সময়ে পিসি রোড দিয়ে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ফুল ফুটলে আপনা-আপনি সৌরভ ছড়িয়ে পড়বে। ১শ মিটার কার্পেটিং করে স্ট্যান্ডবাজি করে মানুষকে বোকা বানানোর চেয়ে কাজ করে দেখাতে চাই। দুর্ভোগ যখন কমবে, গাড়ি যখন চলবে তখন মানুষ এমনিতে জানতে পারবে বলে মন্তব্য করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।