ডিম দুধ মাংসের ‘অতিদাম’ আমিষের ঘাটতিতে মানুষ

14

এম এ হোসাইন

সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক পরিবারকে হিমশিম খেয়ে চলতে হচ্ছে। মাংস, ডিম, দুধের মতো প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলো অনেক পরিবারের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ খাবারের পুষ্টিগুণের উপর সুস্বাস্থ্য নির্ভরশীল। প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উপাদান মাংস, দুধ, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্য প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে রমজানে শরীর সুস্থ্য রাখতে প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলোর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। বিষয়টি অনুধাবন করে সরকার ঢাকায় সুলভ মূল্যে প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এমন কোন উদ্যোগ নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজিয়া আফরিন বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা এরকম কোন নির্দেশনা পাইনি। এ রকম উদ্যোগ নিতে হলে সেটা কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের এখনও এমন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নির্দেশনা দেওয়া হলে আমরা অবশ্যই সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব।
বাজারে প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলোর মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। আমিষের উৎসগুলোর মধ্যে সহজলভ্য ও সস্তা উৎস হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির মাংস। অথচ সেই ব্রয়লার মুরগির দাম এখন প্রতি কেজি ২০০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। সা¤প্রতিক গরুর মাংস ও মুরগির দামে হতাশ হয়ে ক্রেতাদের মাছের বাজারে গিয়ে দামের আগুনে পুড়তে হচ্ছে। কম দামের পাঙ্গাস থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছের দামও বাড়তি।
মাছ-মাংসের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের কিছুটা চাহিদা পূরণ করছিল ডিম। কয়েক মাস ধরে ওই ডিমের রেকর্ড দামে এসব মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ নাগালের বাইরে চলে গেছে। প্রতি ডজন ডিম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমিষের আরেক উৎস দুধ। তরল দুধের দাম লিটার প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের আমিষের চাহিদায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমিষের অন্যতম উপাদানগুলোর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ঢাকায় ভ্রাম্যমাণভাবে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রমজানজুড়ে ঢাকায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে চট্টগ্রামে আমিষের যোগানের সুলভ মূল্যের কোন উদ্যোগই নেই। যদিও করোনাকালীন চট্টগ্রামে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রম পরিচালিত করে প্রসংশিত হয়েছিল। কিন্তু রমজানের আগে এসব উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত দামেও কোন উদ্যোগ নেই চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামের সাবেক জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রমজানে প্রাণিজ আমিষের উপাদানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইফতারের পর পানির ঘাটতি মেটাতে শরবত, জুস এগুলো পান করতে হবে। তারপর সিদ্ধ ডিম খেতে পারে। খাবারের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো থাকা দরকার। কোন অবস্থাতেই ভাজাপোঁড়া খাওয়া উচিত নয়।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মোট ছয় ধরনের খাবার রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। দৈনিক গড়ে একজন মানুষের ২ হাজার ১০০ কিলোক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে আমিষজাতীয় খাবার যেমন, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ১০-১২ শতাংশ থাকতে হয়। ভাত ও রুটি বা শর্করাজাতীয় খাবার থাকতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ। আর বাকি ২০-২৫ শতাংশ তেলজাতীয় খাবার থেকে আসতে হয়।
প্রতিদিন ভিটামিন ও খনিজ যেমন- শাকসবজি, ফলমূল খেতে হয়। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য দুধ খেতে হয়। শুধু প্রাণিজ উৎস থেকে আমিষ পাওয়া যায় তা নয়, ডাল থেকেও আমিষ পাওয়া যায়। তবে প্রাণিজ আমিষই হচ্ছে প্রথম শ্রেণির আমিষ, যা পাওয়া যায় মাছ-মাংসে। মানুষের শরীরে আমিষের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে নানা রোগ দেখা দিতে পারে। পুষ্টিহীনতায় বর্ধন কমে যেতে পারে।
সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসে রাজধানীর ৩০টি স্থানে ট্রাকে করে কম দামে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি করা হবে। ১০ মার্চ এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস, ৯০০ টাকা কেজিতে খাসির মাংস, ব্রয়লার মুরগি (ড্রেসড) ২৮০ টাকা কেজি এবং প্রতিটি ডিম সাড়ে ১০ টাকা করে বিক্রি করা হবে।
উল্লেখ্য, করোনাকালীন মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণে দৈনিক ৪০ হাজার পিস ডিম ও ৪০ টন দুধ বিক্রি করছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কৃষকদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে এ প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উপাদানগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তাছাড়াও গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি ও খাসির মাংসও বিক্রি করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ এই ট্রাকে। মাংস, দুধ, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্যের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তখন। তবে অল্প কয়েকদিন স্থায়ী ছিল এই কার্যক্রম। তখন ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রমে প্রতিলিটার দুধ ৬০ টাকা, প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, প্রতিটি ডিম ৬ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১১৬ টাকা এবং প্রতিকেজি খাসির মাংস ৭৫০/৭০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছিল।