ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বাবুলের রিমান্ড নামঞ্জুর

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় কারাবন্দি ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। পাশাপাশি নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে তাকে এক ঘণ্টা কথা বলার অনুমতিও দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আব্দুল হালিম গতকাল রবিবার উভয় পক্ষের করা পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানার দায়ের করা মামলাটির তদন্ত সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিল।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম বলেন, আদালত শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একান্তে কথা বলার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালত সহকারী পুলিশ কমিশনারের কক্ষে এক ঘণ্টা কথা বলার অনুমতি দিয়েছেন।
মামলার আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ জানান, দুপুর সোয়া দু’টা থেকে তারা প্রায় এক ঘণ্টা বাবুল আক্তারের সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেছেন।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর স্ত্রী খুনের মামলায় বাদী থেকে আসামি হওয়া বাবুল আক্তার ও মার্কিন প্রবাসী ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনসহ চার জনের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন পিবিআই এসপি নাঈমা সুলতানা। একই বছরের ২৪ নভেম্বর আদালত কারাবন্দি বাবুল আক্তারকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি বাবুল আক্তার, তার ভাই এবং বাবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইন বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ‘স্ত্রী খুন, স্বামী জেলে: খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে ৪২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। ওই ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে প্রচার করা হয়।
গত ৩ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবু বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবিরের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান।
অপরদিকে, স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী অব্যাহতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআই গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। চার্জশিটে অভিযুক্ত অন্যরা হলেন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক। চার্জশিট গ্রহণের পর বর্তমানে তা অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
চার্জশিটে পিবিআই বলেছে, ‘পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায়’ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার ‘সোর্সদের দিয়ে’ স্ত্রী মিতুকে ‘খুন’ করান বলে তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিটে মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে। তাদের পাঁচজন এ মামলার বর্তমান ও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মাহমুদা খানম মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাÐের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন মিতুর স্বামী ও তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। হত্যাকাÐের পাঁচ বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তে নানা নাটকীয়তায় বাদী বাবুল আক্তারই স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন।