ডিএনএ নমুনা অন্যের হাতে দিলে যে সমস্যা হতে পারে

47

সম্প্রতি আমি একটি পাত্র থুথু ফেলে একটি খামে ভরে সেটি বিশ্লেষণের জন্য পাঠিয়ে দেই। বহু মানুষ ইদানীংকালে নিজের ইচ্ছায় তাদের ডিএনএ দিয়ে দিচ্ছে। নিজের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে জানা এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার জন্য তারা এ কাজ করছেন। নিজের সবচেয়ে গোপনীয় তথ্য কেন আমরা অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি? এর বিনিময়ে আমরা কী পাচ্ছি? যদি আপনি আপনার তথ্য ফেরত চান, তাহলে কী হবে? সা¤প্রতিক বছরে ডিএনএ টেস্ট করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত চারটি ডাটাবেস প্রতিষ্ঠানে দুই কোটি ষাট লাখ মানুষ তাদের ডিএনএ অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে – অ্যানসেসট্রি, ২৩এন্ডমি, মাইহেরিটেজ এবং জিন বাই জিন। ২০১৬ সালে টুয়েন্টি থ্রি অ্যান্ড মি নামের প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাছে সংরক্ষিত ডিএনএ তথ্য ১৩টি ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে দিয়েছে।
জেনেটিক নামের একটি ঔষধ কোম্পানি ১০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে পারকিনসন্স রোগে ভুগছে এমন ব্যক্তিদের ডিএনএ তথ্য নিয়েছে। অন্যদিকে এই তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করার জন্য গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ৩০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
‘টুয়েন্টি থ্রি অ্যান্ড বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকদের ৮০ শতাংশ ডিএনএ দিয়েছে গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য। তারা চাইলে যে কোন সময় সেটি প্রত্যাহার করতে পারে।
অ্যালবার্টা ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য আইন ইন্সটিটিউটের পরিচালক টিম কলফিল্ড বলেন, মানুষ জেনে-বুঝে তার ডিএনএ দিচ্ছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
কারণ, ডিএনএ দেবার আগে তারা একটি লম্বা প্রশ্নমালা পূরণ করে। তখন মানুষ বুঝেশুনে এটি করছে কিনা সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর দিকে মানুষের নজর দেয়া উচিত। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান অনেক সময় ঔষধ কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করে”, বিবিসিকে বলেন কলফিল্ড।
ডিএনএ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্রাহক যে কোন সময় চাইলেই তাদের সম্মতি প্রত্যাহার করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা বেশ জটিল।
এই তথ্যগুলো যখন একত্রিত করা হয়, তখন এগুলো ফিরে পাওয়া বেশ জটিল। যদি প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে কী হবে?” প্রশ্ন তোলেন মি: কলফিল্ড। দেউলিয়া হয়ে যাওয়াটাই একমাত্র বিষয় নয়।
গত মে মাসে ভাইস নিউজ-এর সাংবাদিক সামন্থা কোল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই তার যোনিপথ সংক্রান্ত পরীক্ষার কিছু কাগজপত্র জব্দ করেছে। ডিএনএ ফার্ম ইউবায়োমি’র কাছে যোনিপথ সংক্রান্ত নমুনা দিয়েছিলেন মিস কোল। এফবিআই যখন এই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করে তখন এসব তথ্য তারা নিয়ে যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় মার্কিন পুলিশ ডিএনএ তথ্য সংগ্রহকারী ফার্মগুলোর তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করেছে।
গত এপ্রিল মাসে মার্কিন পুলিশ এমন এক ব্যক্তির ডিএনএ তথ্য আপলোড করেছে যিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে একাধিক ধর্ষণ, হত্যা এবং চুরি-ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত। পুলিশ যেখানে এই ডিএনএ তথ্য আপলোড করেছে সেটি একটি ফ্রি অনলাইন তথ্যভান্ডার। এখানে যে কোন ব্যক্তি তার জেনেটিক কোড আপলোড করে তার স্বজনদের খুঁজে নিতে পারে।
লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজ-এর ইনফরমেশন সিকিউরিটি রিসার্চ গ্রুপের প্রধান এমিলিয়ানো ক্রিসটোফারো বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষের ডিএনএ তথ্যভাÐার গড়ে তুলছে, তারা কখনো তথ্য নিরাপদ রাখার নীতি মেনে চলে না। গ্রাহকদের স্বার্থের বিষয়টি তাদের মনে থাকে না। আমরা যখন বিভিন্ন কোম্পানিকে সাধারণ কোন তথ্য দিয়ে থাকি, তখন সেটি আমাদের বিষয়। যদি আমি নিজের জন্মগত তথ্য অন্যকে দিই তাহলে সেটি আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কেও প্রভাবিত করবে। আমরা জানিনা এসব তথ্যের ভেতরে কী রয়েছে। প্রতি মাসে আমরা এ ধরণের জন্মগত তথ্য সম্পর্কে নতুন-নতুন বিষয় শিখছি। এই মুহূর্তে বিষয়টি স্পর্শকাতর না হলেও ভবিষ্যতে এটি বেশ স্পর্শকাতর হয়ে উঠবে।
ইউসিএল ইন্সটিটিউট-এর অধ্যাপক জয়েস হারপার বলেন, তিনি দুটো ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাÐার ব্যবহার করেছেন তার বংশতালিকা খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে তথ্য নিরাপদ রাখার নীতি ব্যবহার করা হয় কিনা সেটি নিয়ে তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
সাধারণ মানুষের জীবন রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং চিকিতসার ক্ষেত্রে উন্নতি করা যাবে। কিন্তু তারপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
টিম কলফিল্ড মনে করেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাকে যে তথ্য দেয়া হয়েছে সেটি খুব একটি সহায়ক নয়।
আমি যে পরীক্ষা করেছি, সেখানে দেখা গেছে আমার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে।আমাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে ধূমপান না করতে, বেশি ব্যায়াম করতে এবং মধ্যম মাত্রায় মদ্যপান করতে। এটা জানার জন্য আমার জেনেটিক টেস্ট করা লাগেনি। টোয়েন্টি থ্রি এন্ড বিবিসিকে বলেছে, এ ধরণের পরীক্ষা করার একমাস পর অর্ধেক উত্তরদাতাই তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার জন্য চিন্তা করছে, পরিকল্পনা করছে নতুবা পরিবর্তন আনা শুরু করেছে।
মানুষের বংশ সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয় সেটি কতটা সঠিক তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৭ সালে তিনজন যমজ ভাইবোন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করেছিল।
তাতে দেখা গেছে, প্রতিটির ফলাফল ভিন্ন-ভিন্ন হয়েছে। একজনকে বলা হয়েছে, তার বংশ ১১ শতাংশ ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান। আরেকজনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ১৮ শতাংশ এবং আরেকজনের ২২ শতাংশ।