ডা. নুরুন নাহার জহুর

128

হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান

আজ ১২ মার্চ, ২০২০ তারিখে আমার মাতা মরহুমা ডা. নুরুন নাহার জহুর এর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার মা মরহুমা ডা. নুরুন নাহার জহুর ১৯৩২ সালের ১২ ডিসেম্বর বার্মার (মায়ানমার) রেঙ্গুনে আমার নানার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু ও শৈশবকাল কেটেছে রেঙ্গুনে। তিনি ১৯৪২ সালে চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাসটিকাস স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৪৯ সালে গুলএজার বেগম হাইস্কুল হতে মেট্রিক পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুল এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে এল.এম.এফ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রামে জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত ফ্যামেলি প্ল্যানিং বিভাগে চট্টগ্রাম জিলার মেডিকেল অফিসার হিসাবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি রাজনীতি, সমাজসেবা, সাহিত্যহর বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমৃত্যু সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৯ সালে যখন চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়ন করছিলেন। ১৯৫০ সালে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র রাজনীতি থেকে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের জন্ম হওয়ার পর তিনি ১৯৫০ সাল হতে ১৯৮৬ সাল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে কাজ করেন। ১৯৫২-৫৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের কার্যকরী সংসদের সদস্য নির্বাচিত ও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম ভাষার দাবির মিছিল পরিচালনা করেন।
তিনি তখন তমদ্দুন মজলিশের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন পরবর্তীতে ১১ দফা এবং ৬৯ সালের গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত হন এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সক্রিয়ভাবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে চট্টগ্রাম শহরে আওয়ামীলীগের পুনর্গঠনের সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং কাজ করেন। তিনি ১৯৭৫-৮৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য (আমৃত্যু) ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে গেছেন।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কাজ করার সময় আমার পিতা মরহুম জহুর আহম্মদ চৌধুরীর সাথে পরিচয় এবং পরবর্তী ১৯৫৫ সালে বিবাহ হয়। ৬০ দশকে ৬ দফা, ১১ দফা, আয়ুব বিরোধী আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলন টানা ১৯৬০ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ঘোষিত আন্দোলন সংগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং চট্টগ্রামের মহিলাদের নেতৃত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামে মহিলাদের সংঘটিত করেন আগ্রাবাদ এবং ও.আর. নিজাম রোডে মহিলাদের যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করেন। ২ মার্চ বিকাল তিনটায় ঐতিহাসিক লালদিঘির ময়দানে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর বিশাল সমাবেশে চট্টগ্রামের মহিলাদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১১:৩০ মি. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দামপাড়া বাসায় ৮০৭৮৫ টেলিফোন এ স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠানোর জন্য ফোন করেন। তখন আমার বাবা জহুর আহম্মদ চৌধুরী চট্টেশ্বরী সড়কের মেডিকেল হোস্টেল এর বিপরীতে পাহাড়ের উপর ওয়াপদা রেস্ট হাউজে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের সাথে অবস্থান করছিলেন। আমার মা টেলিফোন কলটি গ্রহণ করেন এবং বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ডিকটেশন দেন এবং আমার মা ডা. নুরুন নাহার জহুর নিজের হাতে লিখে নেন এবং তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রেরিত স্বাধীনতা ঘোষণাটি কয়েক কপি লিখে নেন। এক কপি আমার বাবার নিকট প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম শহরে প্রচারের জন্য বাংলা অনুবাদ করে তিন আওয়ামী লীগের তৎকালিন নেতাকর্মী প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে জনাব ইদ্রিস আলম, বদন দিদারী, বদিউল আলম, নুর মোহাম্মদ, মোস্তাসিম বিল্লাহ, ইলিয়াস চৌধুরী ভোর রাত থেকে চট্টগ্রাম শহরে মাইক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী প্রচার করেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরের অলি গলিতে স্বাধীনতা ঘোষণাটি দুপুর পর্যন্ত প্রচার করে। এই কাজের নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি যার ভূমিকা ও পরিচয় না দিলে অকৃতজ্ঞতায় প্রকাশ পাবে তিনি হলেন, নুরুল হক। চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পিয়নের কাজ করতেন। নুরুল হক আমার বাবা জহুর আহম্মদ চৌধুরী যাবতীয় কাজ করতেন। সে আমার মায়ের নিকট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা বাণীটি সংগ্রহ করে। প্রথমে আমার বাবাকে পৌঁছায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শহরের নেতাকর্মীদের বিলি করেন। এমনকি সে সাইক্লোস্টাইল মেশিনে কপি করে সারা শহরের নেতাকর্মীদের বিতরণ করেন। “নুরুল হক”-এর অবদান ও ইতিহাস চট্টগ্রাম শহর আওয়ামীলীগের ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত। নুরুল হকের নাম ছাড়া চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ইতিহাস লিখা কখনো পরিপূর্ণ হবে না।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ১১:৩০ মি সেই ভয়াল রাতে আমরা দামপাড়া বাসায় এক আতংকিত এবং নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে ছিলাম। রাত ৮ টার পর থেকে বৃষ্টির মত গোলাগুলি শুরু হয়। আমাদের বাসার নিকটেই দামপাড়া পুলিশ লাইন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দামপাড়া পুলিশ লাইনে অতর্কিত হামলা চালায়। সেই রাতে হাজার পুলিশ সদস্য দামপাড়া পুলিশ লাইনে শহীদ হন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বাণীটি যখন আমার মা ডাঃ নুরুন নাহার জহুর টেলিফোনে গ্রহণ করছিলেন তখনও প্রচÐ গোলাগুলির আওয়াজ ও আকাশে বিজলি চমকানোর মত আলো জ্বলছিল। আমার ১১ বছর বয়সের স্মৃতিতে আজ আমি স্পটভাবে ঐ ভয়াল রাত কে দেখতে পাই।
আমার মা ডা. নুরুন নাহার জহুর রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য ও সমাজসেবা মূলক সংগঠনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। ১৯৪২ সালে আজান পত্রিকার মুকুল মেলার সদস্যা ছিলেন। এরপর মুকুল ফৌজ এর সদস্যা ছিলেন এবং সক্রিয়ভাবে এই সংগঠনে কাজ করেছেন। ১৯৫১ সালে আমাদের মাহফিল, চাঁদের হাট সংগঠন পরিচালনা করছেন। ১৯৪৯ সালে লিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতি (আপোয়া) বর্তমান মহিলা সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সদসা হন। ১৯৫৭ সালে সমাজ কল্যাণ ও স্বাস্থ্য সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৬২ সালে মহিলা সমিতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এককভাবে প্রতিষ্ঠা করেন (বর্তমান বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ বা বাওয়া স্কুল)। এই স্কুলটির জমিতে আমার বাবা লীজ নিয়ে চাষাবাদ করতেন এবং আমার মা বাবার অনুমতি নিয়ে ঐ জমিতে ১৯৫৭ সালে প্রথমে মহিলাদের জন্য একটি সেলাই শিক্ষা কেন্দ্র চালু করেন এবং পরবর্তীতে লিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতি (আপোয়া) অফিস স্থাপন এবং ১৯৬২ সালে আপোয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ৫ম শ্রেণি এই কো এডুকেশন স্কুলটি শুধুমাত্র ৫ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে প্রথমে প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুলে প্রথম ছাত্র-ছাত্রী ছিল আমার বড় ভাই শাহীন, বোন শিরিন এবং বেগম সাজেদা চৌধুরীর সন্তান বাবলু ভাই ও ছোটকা ভাই এবং নিজাম।
ধীরে ধীরে এই স্কুল সুনামের সাথে এগিয়ে যেতে থাকে লিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতির (আপোয়ার) তত্ত¡াবধানে। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা অগ্রগতি এবং জমি সবই আপোয়া অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ মহিলা সমিতির দেওয়া। আমার মা ডা. নুরুন নাহার আমৃত্য এই সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭২ সালে সভানেত্রী এবং পরবর্তীতে সহ-সভানেত্রী দায়িত্ব পালন করেন।
শৈশব থেকে আমার মা ডা. নুরুন নাহার জহুর সাহিত্য চর্চার সাথে সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি, চিত্র অংকন, সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাজসেবার সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪২ সালে আমার মায়ের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা কমডোর কল্পনা দত্ত এবং তার বোন রমলা দত্ত ছিলেন আমার মায়ের ক্লাস টিচার। তাঁর সান্নিধ্যে আমার মা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং চট্টলার ইতিহাস তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জেনেছেন। আমার মা ছিলেন বইপ্রেমী। আমৃত্য প্রতিদিন ভোর সকাল থেকে কোরআন শরীফ তেলওয়াত দিয়ে শুরু করতেন এবং দৈনিক পত্রিকা পড়ার পর বইপড়া ও লেখালেখি শুরু করতেন। আমার মা ঐতিহাসিক “বেগম পত্রিকার” নিয়মিত লেখক ছিলেন। শুধু বেগম পত্রিকা নয় তিনি ১৯৫৫ সাল থেকে আমৃত্যু ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বেগম, সত্যবার্তা, কাফেলা, ইত্তেফাক, আজাদী, কোহিনুর, সৈনিক, হেরেম, আমান, পূরবী প্রভৃতি পত্রিকা সংকলন ও মাসিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন।
১৯৪৯ সালে আমার মা যশোর সাহিত্য সংঘ কর্তৃক প্রদত্ত “সাহিত্য রত্ন” উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৯-৭০ সাল পর্যন্ত নিজ সম্পাদনা ও উদ্যোগে ২১ শে সংকলন “রক্তরাঙ্গা ফাল্গুন” সংকলন প্রকাশিত করেন। ১৯৭২ সালে লেখিকা সংঘ ঢাকার কার্যকরী সংসদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ ঢাকার “মেগদূত” সাংস্কৃতি সমিতির সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৭৭ সাল হতে ১৯৮৬ সাল থেকে আমৃত্যু চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।
আমার নানী “জয়নব বেগম” অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তৎকালীন এ্যানট্রেন পাস নানী সাহিত্যের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। আমার নানা ইঞ্জিনিয়ার ওবায়েদুল হক নানীর জন্য ঢাকা, কোলকাতা ও বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে বই সংগ্রহ করে দিতেন এবং এইসব বইগুলো আমার মা নিয়মিত পাঠ করতেন।
আমার শৈশব থেকে বড় হয়ে উঠা পর্যন্ত অনেক বই দেখেছি আমার মায়ের সংগ্রহে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার মা ডা. নুরুন নাহার জহুর সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুজিব নগর স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পরিচালিকা উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন এবং আগরতলা জিপি হাসপাতাল যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতে ডাক্তার হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ঐ কাজে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আমার বাবার বি.এল.এফ অফিসের কাজ কর্মে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতেন। স্বাধীনতা উত্তর নির্যাতিত অসহায় নারীদের পূনর্গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাস হতে কাজ শুরু করেন।
১৯৭২ সালে আমার পিতা মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রীসভার মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হওয়ার কারণে সর্বপ্রথম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে কাজ শুরুর প্রথম দিন আমার মা ডা. নুরুন নাহার জহুরকে তাঁর চাকুরী হতে অব্যাহতি প্রদান করেন। যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমার মায়ের চাকুরীতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে সে কথা বিবেচনা করে আমার বাবা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আমার মা খুবই মর্মাহত হন । আমার বাবা আমার মাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালনায় স্ত্রী একই মন্ত্রণালয়ে চাকুরী করলে প্রভাব বিস্তার করার ও ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। তাই তিনি আমার মাকে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অধীনস্থ দপ্তরের চাকুরী হতে অব্যাহতি প্রদান করেন। পরে আমার মা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রোগীর সেবা দেওয়া শুরু করেন।
আমার মা ডা. নুরুল নাহার জহুর একজন ধনাঢ্য পরিবারের কন্যা হওয়া সত্তে¡ও, আমার বাবার সাথে বিবাহ হওয়ার পর, একটি সাধারণ দরিদ্র পরিবারে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক পরিবারের হাল ধরেছিলেন। আমার বাবা জহুর আহম্মদ চৌধুরী ছিলেন একজন অতি সাধারণ মানুষ, জীবনে কখনো লোভ লালসা বা প্রাপ্তির দিকে দেখেন নাই। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকেও উনার মৃত্যুর পর আমাদের ভবিষ্যৎ এ জন্য ন্যূনতম জীবন ধারণের চাহিদা পূরণের জন্য কিছু রেখে যাননি। এমন কি মৃত্যুর পরদিন আমাদের বাসায় বাজারের টাকা রেখে যান নাই।
আজকের রাজনৈতিক নেতাদের জীবন যাপনের চিত্র দেখে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, কিভাবে একজন রাজনৈতিক নেতা বিলাসী জীবন যাপন করেন। দামী গাড়ী, বিলাস বহুল বাড়ি, উচ্চবিলাসী সামগ্রী ব্যবহার করেন। ব্যাংকের জমানো টাকা বা সম্পদের কথা নাই বা বললাম। আমার বাবার সময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন¡ থেকে যে সকল রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনে দীর্ঘ সময় ত্যাগ ও তিতিক্ষা করে, আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছেন একটি মানচিত্র, একটি পতাকা একটি জাতীয় সঙ্গীত। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সে সকল রাজনীতিবিদদের। সর্বমেষ আমার মায়ের এবং বাবার রুহের মাগফেরাত কামনা করে রেকার ইতি ঠানলাম।
লেখক : মরহুমার সন্তান ও রাজনীতিক