ডাটা এন্ট্রি ও ফিঙ্গার প্রিন্টে ভোগান্তি

13

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পূর্বের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি লিমিটেডের তৈরি করা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে নবায়ন করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালকদের। এদিকে বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিদিন ৩০০-এর বেশি আবেদন সার্ভারে ডাটা এন্ট্রি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে পারছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে সরেজমিনে গেলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
বিআরটিএ থেকে বলা হচ্ছে, তারা প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ আবেদন প্রসেসিং করছে। ৩০০ প্রার্থীর ডাটা এন্ট্রি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় লাগে। অথচ অফিস টাইম হচ্ছে ৮টা থেকে ৩টা। তাই প্রার্থীদের পরবর্তী একটা সময় বেঁধে দিয়ে পুনরায় ডাটা এন্ট্রি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিনহাজুল ইসলাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্স বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত ১০ অক্টোবর বায়োমেট্রিক করার জন্য অনুমোদন পান। কিন্তু প্রার্থীদের চাপ বেশি থাকায় ডাটা এন্ট্রি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে পারেননি তিনি। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা তার প্রাপ্তি স্বীকার রশিদের মেয়াদ পুনরায় বাড়িয়ে দেন এবং পরবর্তী তারিখে সকাল ৭টায় অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। মিনহাজ পূর্বদেশকে বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) বায়োমেট্রিক করাবো বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি। এখন আমাকে পুনরায় আসার জন্য বলা হচ্ছে। একটা কাজের জন্য অফিস থেকে কয়বার ছুটি নেয়া যায়, তাছাড়াও শহর থেকে বিআরটিএ কার্যালয়ে আসতে প্রচুর ভোগান্তি হয়।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ডাটা এন্ট্রি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে আসা দৈনিক পাঁচশো এর বেশি প্রার্থী ফিরে যাচ্ছেন। এক কাজের জন্য কয়েকবার আসতে হচ্ছে বিধায় অনেকে কর্মচারীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, সকাল ৮টায় অফিসে আসি, লাইসেন্সপ্রার্থীদের চাপ থাকলে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত থাকি। তিনি আরও বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) ২৭০ জন প্রার্থীর তালিকা মাদ্রাজ সিকিউরিটিকে দিয়েছি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার নতুন ৭৫ জন, নবায়ন ৬৩ জন, চট্টগ্রাম মেট্রোর নতুন ৬৪ জন এবং নবায়ন ৭১ জন প্রার্থীর ডাটা এন্ট্রি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পন্ন করেছি।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা, ইন্টারনেট ¯েøা এবং সার্ভার দুর্বল হওয়ার কারণে কাজ করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচশো থেকে ছয়শো মানুষ ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে আসলেও ৩০০-৩১০ জনের মত বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করে, বাকিদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক মো. সামির হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর লাইসেন্সের প্রতি চালকদের আগ্রহ বেড়েছে। তাই চাপটা একটু বেশি। আমি শুনেছি আগামী ডিসেম্বর থেকে লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি পর্যন্ত কিনতে পারবেন না। যার লাইসেন্স থাকবে, তার কাছে গাড়ি বিক্রি করা হবে, এমন নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে বিআরটিএ।
তিনি আরও বলেন, আমরা গতানুগতিক কাজের বাইরে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে হলেও মানুষের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছি। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ এর বেশি ডাটা এন্ট্রি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট করতে পারছি না। আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও আমরা লাইসেন্স প্রার্থীদের কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করছি।