ডাক বিভাগকে দ্রæত ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা জরুরি

33

দেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা একপ্রকার নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় দেশে ৯ হাজার ডাকঘর ও তাতে ৪৪ হাজার কর্মী কাজ করছে। ডাক বিভাগ ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মচারীদের বেতন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের আয় হতে দেয়া সম্ভব হচ্ছে কি না তা নিয়ে দেশের মানুষের মনে ব্যাপক প্রশ্ন আছে। কেননা বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রচলন ও দ্রæত সেবা পদ্ধতির কারণে দেশের সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা ডাক বিভাগের প্রতি অনিহা প্রকাশ করে দূরে সরে গিয়েছে। বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস সাধারণ মানুষের চিঠিপত্র ও প্রয়োজনীয় মালামাল দ্রæত ও নিশ্চিত ভাবে ডাক বিভাগের চেয়ে কম সময় ব্যয় করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ খুশি মনে টাকাকড়ি লেনদেন করে সমস্যার সমাধান করছে। অনলাইন ব্যাংক পদ্ধতি, জনগণের টাকা জমা করণ ও উত্তোলনে বেশি কার্যকর ভ‚মিকা রাখছে। কিন্তু বর্তমানে ডাক বিভাগ হতে জনগণ সন্তুষ্ট নয়। লেনদেনে প্রতারিত হবার ঘটনা ঘটার কারণে ডাক বিভাগে টাকা জমাদানে আস্থাশীল থাকতে পারছে না জনগণ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জিপিওতে সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে ডাকঘর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের তুঘলকি কাÐে ডাক বিভাগ আরো সংকটে পড়েছে। দেশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় একটি অলাভজনক মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। অনলাইন গ্রাহক সেবা, ডিজিটাল পদ্ধতির সংশ্লিষ্ট বেসরকারী সংস্থাগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে কার্যকর ডিজিটালাইজড করা না গেলে জনগণ বিভাগ দু’টির প্রতি আর আগ্রহী হবে না। যার ফলে সরকারের পক্ষে এ দু’টি বিভাগ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এ বিষয়ে যথার্থই বলেছেন ডিজিটালাইজেশনের প্রভাবে ডাক বিভাগে কেউ আর যাচ্ছে না, কথাটি সত্য। তিনি ডাক বিভাগকে ডিজিটাল আবহে ফেলানোর কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে জাতীয়ভাবে সরকার যেভাবে প্রাইভেট কোম্পানি সমূহকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে কাজ করার সুযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকাÐের বিপরীতে দেশের মানুষকে সুবিধাভোগী করে তুলেছে তার সয়লাব হতে জনগণকে ডাক বিভাগের দিকে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কে রবি, গ্রামীণ ফোন ও অন্যান্য কোম্পানিগুলো যেভাবে জেঁকে বসেছে তাতে সরকারি টেলিটক খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কুরিয়ার সার্ভিস এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে প্রাইভেট সেক্টরের চেয়ে অধিক সেবার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করে কম খরচে, সুযোগ দিয়ে দেশের জনগণের আস্থায় আনা সম্ভব হলে দেশের ঐতিহ্যবাহী ডাক ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারবে। নয় তো পুরো মন্ত্রণালয় একটি ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হিসেবে সরকারের গলার ফাঁসে পরিণত হবে। দেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে শুধু ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনলে হবে না, তার সাথে প্রাইভেট সেক্টরের মতো সেবার মান বাড়াতে হবে এবং জনগণের খরচও যেন কম হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কাজটি বড়ো সহজ নয়। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে যেভাবে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অসৎ কর্মকাÐ চলছে তার জাঁতাকল হতে মুক্ত করে ডাক বিভাগকে নতুন উদ্যোগে এগিয়ে নিতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পথ চলতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে সৎ, যোগ্য, দক্ষ জনবল জরুরি। বর্তমান জনবল দিয়ে ডাক বিভাগের ডিজিটালাইজেশন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ডিজিটাল পদ্ধতির অভিজ্ঞ লোক ছাড়া ডিজিটালাইজেশন কার্যকর হবে না। এ বিষয়ে সরকারি উচ্চ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় ডিজিটালাইজেশনের নামে সরকারি টাকার অপচয় হবে মাত্র।
আমরা চাই দেশের ঐতিহ্যবাহী ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাত ঘুরে দাঁড়াক, পুনরায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ জনগণের আস্থা অর্জন করুক। সরকারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হোক এমন আশা দেশবাসীর।