ডাকাতি স্টাইলে গরু লুট হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে

40

শহীদুল ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে গরু চুরির ঘটনা। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গরুর মালিক ও পাহারাদারদের জিম্মি করে চোরের দল গাড়ি ভর্তি করে গরু নিয়ে যায়। এ কারণে আতঙ্কে আছেন গরুর মালিকরা। অনেকটা ডাকাতি স্টাইলেই গরু চুরি বা লুটের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।
এদিকে জনতার হাতে অনেক চোর আটক এবং তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা রয়েছে। তবে খুব কম সময়ে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কারণে চোরের দল আরও বেশি বেপরোয়া বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
গরু চুরির ঘটনা কেন বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গরু চোরদের আটক করা হলেও অল্প সময়ে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এ কারণে তারা পুনরায় একই অপরাধে জড়াচ্ছে। তাই বেড়ে চলেছে গরু চুরির ঘটনা। এতে গরু পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। পটিয়া, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় গরু চুরির ঘটনা ঘটছে বেশি। অনেক গরু চোরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দও করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি রাতে পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে ইউনুচ মিয়ার খামার থেকে পাহারাদারদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১২ লাখ টাকা মূল্যের কয়েকটি গরু ও মহিষ চুরি করে নিয়ে যায় চোর। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়নের করনখাইন গ্রামের সত্যজিৎ দাশের গরুর খামারে রাতে লোহার গ্রিল কেটে চোরের দল ৭টি গরু পিকআপে করে নিয়ে যায়। এসব গরুর মূল্য আনুমানিক ১৩ লাখ টাকা বলে জানান খামার মালিক সত্যজিৎ।
১৮ জানুয়ারি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও কলাউজানে পৃথক গরু চুরির ঘটনা ঘটে। আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি ব্রাহ্মণপাড়ার রেবতি মোহন দাশের পুত্র রাখাল দাশের ২টি, মৌলভী পাড়ার মৃত গুরা মিয়ার পুত্র সৈয়দ আহমদের ২টি, বশির আহমদের ২টি ও কলাউজান ইউনিয়নের উত্তর কলাউজান হাজিপাড়ার নুরুল ইসলামের পুত্র বেলাল উদ্দিনের ৪টি গরু নিয়ে যায় চোর। এসব গরুর আনুমানিক মূল্য সাত লাখ টাকা।
৯ জানুয়ারি রাতে আমিরাবাদ ইউনিয়নের আমিরখান চৌধুরী পাড়ার কৃষক মো. ইদ্রিসের ৬টি গরু চুরি হয়। গত বছরের ২৪ নভেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের রাউজাইন্যা পাড়ার বেলাল উদ্দিনের ১টি, আতিকুর রহমানের ২টি ও এর আগের দিন একই ওয়ার্ডের নতুন বাজার আলির বাপের পাড়ার আয়েশা খাতুনের ৪টি গরু চুরি হয়। এসব গরুর মুল্য আনুমানিক ৫ লাখ টাকা। ১২ জানুয়ারি বাঁশখালী থেকে গরু চুরি করে ফেরার সময় লোহাগাড়ায় ধরা পড়ে বাঁশখালীর জলদি ইউনিয়নের হারঘোনার আলী ইসলামের ছেলে করিম উদ্দিন (২৮)। তার স্বীকারোক্তির পর চুরির ঘটনায় জড়িত লোহাগাড়ার উত্তর কলাউজানের খায়ের আহমদের ছেলে হারুনর রশিদকে (২৪) আটক করা হয়।
গত বছর ৫ ডিসেম্বর সাতকানিয়া থেকে গরু চুরি করে পালানোর সময় গ্রামবাসী ৪ গরু চোরকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। তারা হচ্ছেন বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদন্ডীর মো. ইউনুচের ছেলে মো. ইলিয়াছ (২৬), ওমর আলীর ছেলে মো. শাহজাহান (২৬), পূর্ব গুমদন্ডীর মো. হাসেমের ছেলে মো. হানিফ (৩৩) ও বাঁশখালীর পুকুরিয়ার চানপুর এলাকার শাহ আলমের ছেলে রবিউল আলম (৩২)। ৯ মার্চ সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামনি এলাকায় গরু চুরি করে পালানো সময় বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গুমদন্ডী এলাকার মো. আলমগীর (৩৩), পশ্চিম শাকপুরার মো. ইরফান (২৪) ও পটিয়ার কৈগ্রামের মো. হোসেন (২২)।
লোহাগাড়া থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরির ঘটনা ঘটে। আমি লোহাগাড়ায় গরু চুরির খবর পেয়েই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাহারাবৃদ্ধি করেছি। আমরাও তৎপরতা বাড়িয়েছি। আশা করি, গরু চুরিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারব।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, আমার থানা এলাকায় অনেক গরু চোরকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছি।
মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় অপরাধ বর্ণনাতে দুর্বলতা ও দুর্বল স্বাক্ষীর কারণে দ্রুত জামিনের সুযোগ পেয়ে যায় গরু চোররা।