ডাকসু নির্বাচন আচরণবিধি করে দিয়েই নিশ্চিন্ত কর্তৃপক্ষ

35

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আচরণবিধি নির্ধারণ করে দিলেও তা অনেক প্রার্থীই মানছেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেই আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের মিছিলেও দেখা যাচ্ছে বহিরাগতদের। এই নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে সরব হওয়া ছাত্রদলের মিছিল থেকে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েও ¯েøাগান দেওয়া হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের
এক প্রার্থীর ব্যানার আড়াল করে অন্যজনের ব্যানার টাঙানো, চলাচলের পথ বন্ধ করে সভা-সমাবেশের মতো আচরণবিধি লংঘনের ঘটনা ঘটলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমরা আচরণবিধি নির্ধারিত করে দিয়েছি। সবাইকে সেটা মানার আহŸান জানিয়েছি আমরা। আচরণবিধি ভাঙার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।”
আচরণবিধি ভাঙার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলেই জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন।
প্রায় তিন দশক অপেক্ষার এই ভোটে ডাকসু ও হল সংসদে মোট ৭৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রত্যেক ভোটারকে ৩৮ জনকে বাছাই করতে হবে। চূড়ান্ত তালিকায় এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ২৫৫ জন।
মসজিদ বা মন্দিরের মতো ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও শুক্রবার জুমার নামাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের মাইকেই নিজেদের প্যানেলের পক্ষে ভোট চাইতে শোনা যায় ছাত্রলীগ থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে।
এ বিষয়ে আচরণবিধির একটি ধারায় বলা আছে, “কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না।”
কারো প্রচারণায় বাধা দেওয়া নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের বাধায় বৃহস্পতিবার রাতে কুয়েত-মৈত্রী হলে পরিচিতি সভা করতে না পারার অভিযোগ করেছেন স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের প্রার্থীরা।
হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে এক ঘন্টা হলের টিভি রুমে প্যানেল পরিচিতি সভা করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ইলা ইসমাইলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। “কিন্তু ছাত্রলীগ মনোনীত হল সংসদের প্যানেল অনুমতি না নিয়েই সন্ধ্যা ৬টা থেকে হলের টিভি রুমে প্যানেল পরিচিতি সভা করে। স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থীদের অবহিত করেন। তবে তারা টিভি রুম ছাড়েননি,” বলেন স্বতন্ত্র প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী নুরুন্নাহার পলি।
এটা আচরণবিধির স্পষ্ট লংঘন দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা সভা করতে গিয়ে দেখি সেখানে ছাত্রলীগের প্যানেলের সভা চলছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানালে তিনি আমাদের ছাড়া আর কাউকে অনুমতি দেননি বলে জানান। ছাত্রলীগ শেষ পর্যন্ত ওই জায়গা ছাড়েনি।”
কুয়েত মৈত্রী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইলা ইসমাইল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ছাত্রলীগ থেকে মনোনীত প্রার্থীদেরও।
চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করে সমাবেশ এবং মঞ্চ তৈরি নিষিদ্ধ রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিতে। কিন্তু বুধবার অপরাজেয় বাংলার সামনে বড় মঞ্চ তৈরি করে বড় আকারের প্যানেল পরিচিতি সভা করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও প্রার্থীরা।
এদিকে টিএসসি এলাকায় স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ থেকে জিএস প্রার্থী আসিফুর রহমানের ইশতেহার লেখা ব্যানার ঢেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বড় একটি ব্যানার টাঙানো থাকতেও দেখা গেছে।
আচরণবিধি লংঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ছাত্রলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, “আচরণবিধির মধ্যে থেকেই আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। জিএস প্রার্থী মসজিদে ভোট চাননি, মুসল্লিদের কাছে দোয়া চেয়েছেন শুধু।”
আচরণবিধির একটি ধারায় ভোটের প্রচারে ভোটার ও প্রার্থী ছাড়া অন্যদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকলেও প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের বহিরাগতদের। ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে প্রচার মিছিলও করছেন তারা।
এ বিষয়ে ছাত্রদল থেকে ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাইরের যেসব নেতাকর্মীরা আসছে, তারা ভোটের প্রচারে অংশ নিচ্ছে না। তারা কেবল দলীয় কর্মকান্ড চালাতে আসছেন।”
মিছিলও ভোটের বাইরে দলীয় কর্মকান্ডের অংশ হিসাবেই হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রভোস্টের পদ
থেকে অধ্যাপক
মিজানের পদত্যাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ছেলেকে মারধর করেছেন এবং তিনি নিজেও তাদের হাতে মর্যাদাহানির শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকালে ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বরাবর তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে দুপুরে ফজলুল হক হলের মসজিদে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিজানুর রহমানের ছেলের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে তার ছেলেকে মারধর করা হয়। পরে নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে মিজানুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে হল শাখা ছাত্রলীগ। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সামান্য একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করাই অযৌক্তিক ছিল। হলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রদের জন্য এতকিছু করার পরও তারা যখন আমার পদত্যাগ দাবি করে, তখন একজন শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা নিয়ে থাকাটা যৌক্তিক নয়। তাই আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবেই পদত্যাগ করেছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, ফজলুল হক মুসলিম হলের মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে আসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মিজানুর রহমানের ছেলে। মসজিদে জায়নামাজ বিছানোর সময় অন্য এক শিক্ষার্থীর পায়ে পা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হন ওই শিক্ষার্থী। নামাজ শেষে মিজানুর রহামানের ছেলের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীসহ অন্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মিজানুর রহমানের ছেলেকে মারধর করেন তারা। হলের ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদের প্রার্থীরা অবস্থান নেন। তারা অন্য নেতাকর্মীদেরও জড়ো করেন। এরপর প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি তোলেন তারা।
ঘটনার খবর পেয়ে ফজলুল হক হলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তারা গিয়ে নেতাকর্মীদের শান্ত করেন।
সনজিত চন্ত্র দাস বলেন, ‘কিছু অতি উৎসাহী সামান্য একটি ঘটনাকে এত বড় করেছে। আমরা খবর পেয়ে হলে যাই। সেখান থেকে ছাত্রদের সরিয়ে দিয়ে স্যারের সঙ্গে বেরিয়ে আসি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফজলুল হক হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আগে থেকেই হল মিজানুর রহমানে সঙ্গে হল শাখা ছাত্রলীগের দূরত্ব তৈরি হয়। আজ একটা সুযোগ পেয়ে ছাত্রলীগ সেটাকে কাজে লাগিয়েছে।
সামান্য ঘটনাকে উস্কে দিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, তাদের বিচার দাবি করেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যারা সামান্য ঘটনা নিয়ে এভাবে রাজনীতি করছে, তারা কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিল না। পরবর্তীতে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা যে ছাত্রদের উস্কে দিয়েছে, ওখানে যারা ছিল তাদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। ছাত্র নাম নিয়ে যারা এ কাজটি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। হলের দায়িত্বে থাকার সময় সাধারণ ছাত্রদের জন্য করা আমার কাজগুলোই হয়তো কাল হয়েছে। যা হয়তো কোনও পক্ষের পছন্দ হয়নি।’