ট্রাম্পকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উত্তাপ

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন নিয়ে কয়েকদিনের জল্পনা শেষ পর্যন্ত সত্যই হল। সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়া কেবল তার নিজের এবং রিপাবলিকান পার্টির জন্যই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি গুরুতর ব্যাপার। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আত্মবোধ, ঐতিহ্যবাহী গণতন্ত্র ও সুমহান আত্মমর্যাদায় চপেটাঘাত বলেই অভিমত বিবিসি-র বিশ্লেষক ও ওয়াশিংটন সংবাদদাতা গ্যারি ও’ডোনোগুর।
গ্যারি বলছেন, এটি সত্য যে, সাবেক এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ১৮৭২ সালে তার ঘোড়ায় টানা গাড়ির দ্রুতগতির জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গঠন হয়নি। বলা হচ্ছে, ইউলিসিস এস গ্রান্ট এর কথা। ১৮৬৫ সালে একজন কমান্ডিং জেনারেল হিসাবে যিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধে ইউনিয়ন বাহিনীর জয় এনে দিয়েছিলেন।
পরে ‘আমেরিকান বীর’ হিসাবে গ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৮৬৯ সাল থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত শাসনামলে তিনি আইনি ঝামেলায় পড়লেও তার বিরুদ্ধে কখনও ফৌজদারি মামলা হয়নি। সেদিক থেকে তিনি একরকম উৎরে গেছেন।
তবে বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সেটি তেমন কোনো ব্যাপার নয়। গ্যারির মতে, কয়েকটি দিক থেকে দেখতে গেলে, একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া, এমনকী তিনি জেলে গেলেও সেটি কোনো খবর নয়। কারণ, সময়ে সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটি ঘটেছে। শত শত প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং সামরিক নেতারা প্রাসাদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সরাসরি জেল হয়েছে তাদের।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে আলাদা হিসাবেই দেখে। আর ওয়াশিংটনের অবস্থান যেন একটি পাহাড়ের ওপর, যে নগরী পাহাড়ের মতোই উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বে ন্যায়পরায়ণতা, গণতন্ত্রের বাতিঘর হয়ে আছে।
সুতরাং, সেই বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা শুধু তার জন্যই সমস্যাজনক নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক আত্মবোধের ওপরেও নতুন করে আরেক আঘাত।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতেও গণতন্ত্রের ওপর বড় ধরনের আঘাত দেখেছে। ওই দিন ট্রাম্পের আহ্বানে তার সমর্থকরা পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সহিংস তান্ডব চালিয়েছিল। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের আত্মবোধ ও আত্মমর্যাদা ভ‚লুণ্ঠিত হয়। খবর বিডিনিউজের
দেশের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিভক্তি ছড়িয়ে ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দিক থেকে বাড়তে থাকা ভ‚রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে।
একদিকে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণ, অন্যদিকে চীনের নতুন হম্বিতম্বি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এতে গোটা বিশ্বজুড়েই যুক্তরাষ্ট্রের আত্মমর্যাদা হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আত্মমর্যাদা আরও একবার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হল।