ট্রাকের তেলের ট্যাংকে গোপন স্থানে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ইয়াবা

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

ট্রাকের তেলের ট্যাংকের মধ্যে লুকিয়ে ইয়াবা পাচারের সময় তিন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন ব্যবসার আড়ালে টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচার করছিল বলে জানা গেছে।
গত শনিবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকসহ আমিনুল ইসলাম (২৬), হেদায়েত উল্লাহ (২০) ও মো. নুরুল ইসলামকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। তবে চক্রের ‘হোতা’ ট্রাক মালিক সোহেল পলাতক আছেন।
র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় আমিনুল, হেদায়েত এবং নুরুল আপরাধ স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা গত কয়েক বছর ধরে টেকনাফ থেকে মাদক সংগ্রহ করে রাজধানী হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিলার ও ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছিল।গতকাল রবিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার চক্রটি জানায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ইয়াবা টেকনাফের ডিলারের কাছে আসে। এর পর টেকনাফ ও ঢাকার ডিলারের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে বিশেষ কোড নম্বর দিয়ে ইয়াবা প্যাকেটজাত করা হয়। ওই কোড নম্বর মিলিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ডিলাররা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী চালান পৌঁছে দিয়ে থাকে।”
তিনি বলেন, “গত চার থেকে পাঁচ বছর যাবৎ চক্রটি পরিবহন ব্যবসার আড়ালে টেকনাফ হতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। চক্রটি টেকনাফ থেকে ইয়াবা রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতো। এই চক্রটি পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীদের মোটা অংকের টাকার ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ইয়াবার চালান পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করে থাকে বলেও সম্মেলনে জানানো হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া চক্রটির সদস্য সংখ্যা সাত থেকে আটজন জানিয়ে আল মঈন বরেন, “ট্রাক মালিক সোহেল ও গ্রেপ্তার আমিনুলের দায়িত্ব ছিল টেকনাফের মাদকের সিন্ডিকেটের কাছ থেকে থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করা। এরপর সোহেলের নির্দেশ মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিত আমিনুল ও অন্যান্যরা।”
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “ইয়াবার কারবারে জড়িত এই চক্রটি তিনটি ভাগে কাজ করে। একটি গ্রুপ ইয়াবা সংগ্রহ করেছে। আরেকটি গ্রুপ চালন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। এছাড়া আরেকটি গ্রুপ ক্রেতাদের কাছেও সরাসরি ইয়াবা পৌঁছে দিত।”
র‌্যাব মুখপাত্র আল মঈন বলেন, “প্রথমে কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি গ্যারেজে বিশেষ পদ্ধতিতে গাড়ির তেলের সিলিন্ডারের মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করে তার মধ্যে ইয়াবা লুকিয়ে পরিবহন করা হয়।”
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী তেলের ট্যাংকে ইয়াবা রাখার পর সোহেল, আমিনুল, নুরুল ইসলাম প্রথমে ট্রাক নিয়ে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে আসে। চট্টগ্রাম আসার পর সোহেল গাড়ি থেকে নেমে যান। এরপর চট্টগ্রাম থেকে আমিনুল, নুরুল ও হেদায়েতকে নিয়ে ওই ট্রাকটি রওনা হয় গাজীপুরের পথে। মাঝে সীতাকুন্ড ও কুমিল্লায় কিছুটা সময় বিরতি নেয় তারা।
র‌্যাব কমান্ডার বলেন, “ট্রাকে অন্য কোনো মালামাল ছিল না। কিন্তু পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্টে ট্রাক থামিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায়, গাজীপুর থেকে মালামাল চট্টগ্রাম নিয়ে আসার জন্য তারা খালি ট্রাক নিয়ে গাজীপুর যাচ্ছে। ট্রাকের ট্যাংকে ইয়াবাগুলো লুকিয়ে রাখার পর তারা নিশ্চিত ছিল যে তল্লাশিতে ধরা পড়বে না। কিন্তু শনিবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে র‌্যাবের তল্লাশিতে ইয়াবাসহ আমিনুল, হেদায়েত ও নুরুল ইসলাম র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে।”
অপরাধীরা কে কার কিভাবে জড়িত হন সে সম্পর্কেও সংবাদ সম্মেলনে তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন।
তিনি জানান, গত পাঁচ বছর ধরে টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পৌঁছে দেওয়ার এই কারবারে ‘ম্যানেজার’ হিসেবে কাজ করছেন হেলপার আমিনুল ইসলাম।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম ট্রাক স্ট্যান্ডে মাদক ব্যবসায়ী ও ট্রাক মালিক সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল আমিনুলের। সোহেলের প্ররোচনায় সেই থেকে আমিনুল কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রাকে হেলপারি শুরু করেন। চালান প্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পেতেন আমিনুল। এর আগে দুই দফায় গ্রেপ্তার হয়ে সোয়া দুই বছর মাদক মামলায় জেলও খাটেন তিনি।