টোলের সিদ্ধান্তে এগিয়ে থাকলেও কাজে পিছিয়ে

31

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক বা বায়েজিদ লিংক রোড প্রকল্প। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা এই রোডটি দর্শনার্থীদের কাছে এখন খুবই পছন্দের স্থান। সড়কটিতে একাধিকবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। আরো পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকায় সঠিকভাবে কাটতে হবে পাহাড়। অন্যদিকে রেললাইনের ওপর ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। এতে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে হলেও কাজ যেন শেষই হচ্ছে না। অথচ সড়কটি থেকে টোল আদায়ের পথেই হাঁটছে সিডিএ।
চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস সড়ক হিসাবে যাত্রা শুরু করে বায়েজিদ সড়ক। দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে সড়কটিতে। সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার সড়কটি প্রথম টোল রোড হিসাবে দেখতে চায় সিডিএ। চারলেনের সড়কটিতে ১২টি কালভার্ট ও ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ একাধিকবার বৃদ্ধি করায় বেড়েছে ব্যয়ও। সর্বশেষ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান) অনুযায়ী এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া ৩২ কোটি টাকা দিতে হবে সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে। মূলত এই টাকা তুলে আনতে সড়কটি থেকে টোল আদায় করতে চায় সিডিএ।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আগে প্রকল্পের ৩২০ কোটি টাকা জিওবি থেকে দিলেও মন্ত্রণালয়ের এক সভায় বর্ধিত ৩২ কোটি টাকা সিডিএ থেকে দিতে বলেছে। কিন্তু সিডিএ’র এত টাকা নেই। আমরা বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তারপরও তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা নিয়েছি, সিডিএ’র ফান্ড থেকে খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো। এরপর সড়কটিকে টোলের আওতায় আনা হবে। সড়কটিতে কি ধরনের গাড়ি চলবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হবে।
১৯৯৭ সালে ৪০ কোটি টাকায় ছয় দশমিক চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রোডটি বাস্তবায়নের প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। দুই লেনের সেই প্রকল্পের আওতায় একটি ওভার ব্রিজ নির্মাণের পর প্রকল্পটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে নতুন আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দফায় সংশোধন করে ৩২০ কোটি টাকায় ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ও বায়েজিদ বোস্তামী রোডের সাথে সংযোগ করে এটিকে চার লেনে উন্নীত করা হয়। সড়কের কাজ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার পর পুরনো ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও নতুন ওভারব্রিজটি নিয়ে রেলওয়ের সাথে সিডিএ’র বিরোধ তৈরি হওয়ায় এটির কাজ শেষ করা যায়নি। ওভারব্রিজটির রেললাইনের উপর উচ্চতা রয়েছে ৭ দশমিক ৬ মিটার। ২০১৬ সালের পর রেলওয়ে ৮ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতার বিধান করে। এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে বিপত্তি দেখা দেয়। অবশ্য এরমধ্যে ওভারব্রিজটির একটি গার্ডার ধসের ঘটনাও ঘটেছে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, রেললাইনের উপরে কতটুকু খালি রাখা হবে তা কয়েক বছর পর পর পরিবর্তন করা যায় না। তাহলে তো বছর বছর ওভারপাস ও ওভারব্রিজগুলো ভাঙতে হবে। আগে যে নিয়ম করেছিল সেটা থেকেও আমরা বেশি উচ্চতা রেখেছি। এখন নতুন করে নিয়ম করলে তো হবে না।
নগরীর যানজট সমস্যা সমাধানে বায়েজিদ বোস্তামি থেকে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে সিডিএ। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯২ শতাংশ। তবে পরিবেশের অনুমোদনের তুলনায় বেশি পাহাড় কাটায় সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে পাহাড় ধসের মতো ঘটনায় দুই দফা সড়কটি বন্ধ করলেও আবার খুলে দিতে বাধ্য হয় সিডিএ। ঝুঁকি নিয়েই সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন পথচারীরা।
সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বায়েজিদ লিংক রোড দুটি টোল রোড হিসাবে অনুমোদন পেয়েছে। ডিপিপিতেই টোল আদায়ের বিষয়টি অনুমোদন করা আছে। টোলের পরিমাণ কেমন হবে সেটা প্রকল্পের কাজ শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গাড়ি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন টোল হতে পারে।
বায়েজিদ লিংক রোডের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সম্প্রতি সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। এতে ৩২ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে প্রকল্পের ব্যয় ৩৫২ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়েছে। সিডিএ বর্ধিত ৩২ কোটি টাকা জিওবি থেকে নিতে চেয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এই টাকা জিওবি থেকে দিতে আপত্তি জানিয়ে সিডিএ’র নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় করতে বলেছে।
সড়কটির প্রকল্প পরিচালক আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, কবে থেকে টোল আদায় হবে এবং টোলের পরিমাণ কত হবে সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্প শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।