টোকিও হতে ইস্তানবুল

29

রূপম চক্রবর্ত্তী

টোকিও হতে ইস্তানবুল বইটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমিও যেন লেখকের সাথে এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের কোনো অঞ্চলে হারিয়ে যাচ্ছি। পেশাগত জীবনের বিচিত্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রাবন্ধিক ও লেখক আবদুর রহিম টোকিও হতে ইস্তানবুল বইটি লিখেছেন। বিভিন্ন দেশ এবং তাদের সংস্কৃতির নিয়ে লেখক বইটিতে চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। পাঠ যোগ্যতা, জীবন পর্যবেক্ষণ এবং প্রকৃতি অবলোকনে বইটি অনন্য এবং পাঠক সমাদৃত। পেশাগত কারণে লেখক তুরস্কের ইস্তানবুল হতে জাপানের টোকিও, গণচীনের বেইজিং, সিঙ্গাপুর সিটি, মালেশিয়ার গেনটিং, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেছেন। লেখক টোকিও জামে মসজিদের বিভিন্ন বিবরণ দিয়ে তাঁর লেখা শুরু করেছেন। মসজিদ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ইবাদত এবং নামাজ পড়ার জায়গা। টোকিও জামে মসজিদের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মসজিদের মাধ্যমে নামাজ পড়া ছাড়াও যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুসংহত করা যায় তার সুন্দর ব্যখ্যা করা হয়েছে। প্রাবন্ধিক আবদুর রহিম মাউন্ট ফুজির অপার সৌন্দর্যের স্মৃতি মন্থন করতে গিয়ে আমাকেও যেন জাপানের উদাওয়ারা রেলস্টেশনে নিয়ে গিয়ে স্বপ্ন সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন। পিলারবিহীন অনন্য সুন্দর ঝুলন্ত সেতু হচ্ছে বসফরাস সেতু। বসফরাসের ক্রুজ শিরোনামের লেখায় এই সেতু সম্পর্কে জানতে পারলাম। সৌদি আরবের সৌন্দর্য্যমন্ডিত নান্দনিক শহর তায়েফের কথা লিখতে গিয়ে লেখক বারবার বাংলাদেশের কথা স্মরণ করেছেন যা তাঁর দেশপ্রেমের চিত্র ফুটে উঠেছে। রেংগুন শহরে যাওয়ার পথে লেখক সিঙ্গাপুর চেংগি এয়ারপোর্টের এক প্রার্থনালয়ের বর্ণনা করেছেন। যে প্রার্থনালয়ে হিন্দু, মুসলিম এবং বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের মানুষ প্রার্থনা করেন অথচ কেউ কারো সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেননা। লেখক আবদুর রহিম ১৯৭২ সালের জুন মাসে চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসায়, অর্থনীতি, সমকালীন বিভিন্ন ঘটনা ও ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে আবদুর রহিম অনেক প্রবন্ধ আমাদের উপহার দিয়েছেন।
তিনি বর্তমান ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের হেড অব সেলস হিসেবে কর্মরত আছেন। টোকিও হতে ইস্তানবুল বইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মাজার শরীফ সম্পর্কে জানার পাশাপাশি পাঠকসমাজ আগ্রার তাজমহল, মালদ্বীপের বিকিনি বীচ, ভারত মহাসাগরের স্নোর কেলিং, শ্রীলঙ্কার পবিত্র স্থান দালাদা মালি গাওয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। ধর্মপ্রাণ লেখক আবদুর রহিমের ভ্রমণ বিষয়ক এই বইয়ের শেষ লেখা ছিল ইস্তানবুলের তোপকাপি মিউজিয়াম যেখানে সংরক্ষিত আছে রাসুল (সাঃ) এঁর চুল মোবারক এবং পদচিহ্ন। উল্লেখ্য তোফকাফি মিউজিয়ামে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্মৃতি চিহ্ন ছাড়াও পূর্ববর্তী অনেক নবী রাসূলের স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। যেকোনো ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই মিউজিয়ামে গিয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
প্রাবন্ধিক আবদুর রহিম এই বইয়ের মাধ্যমে ধর্ম, বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য, মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার অপূর্ব সমন্বয় করেছেন যা যেকোনো পাঠকের মন জয় করতে পারবে বলে আশা করছি। বইসই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এবং ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক লায়ন মো. হাকিম আলীর নামে উৎসর্গকৃত টোকিও হতে ইস্তানবুল বইটির ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার কামনা করছি।