টেম্পুর ১ ও ৭ নম্বর রুট রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি চলে চাঁদার বিনিময়ে

168

বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১ ও ৭নং রুটে চলাচলরত টেম্পুগুলোতে করোনার মধ্যেও যাত্রী তোলা হয় গাদাগাদি করে। যার কারণে এ রুটে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতো থাকছেই। দফায় দফায় অভিযানে চালকদের জরিমানার আওতায় আনা হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যাত্রীরাও কম যান না। গাদাগাদি করে গাড়িতে না উঠার জন্য যাত্রীদের বারণ করা হলেও তারা কর্ণপাত করেন না। এ রুটে টেম্পুতে যাতায়াত ও উঠানামায় ভোগান্তি লেগেই আছে। এ ছাড়া যত্রতত্র টেম্পু স্ট্যান্ডও জনভোগান্তি বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নির্ধারিত আসন সংখ্যা চালকসহ ৬ জন। কিন্তু টেম্পুগুলোতে যাত্রী তোলা হয় ৮ থেকে ১০ জন করে। যা করোনাকালে মারাত্মক ঝুঁকির কারণও বটে।
আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্সিজেন থেকে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত ১নং টেম্পু রুট। এ রুটে সবুজ টেম্পু চলাচল করে। যেগুলোকে আবার টিকটিকিও বলা হয়ে থাকে। এ রুটের টেম্পুগুলো অক্সিজেন-আঁতুরার ডিপু-মুরাদপুর-চকবাজার-গণি বেকারি-কাজীর দেউড়ি-টাইগারপাস-দেওয়ানহাট-চৌমুহনী হয়ে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত গিয়ে পুনরায় একই পথে ফিরে আসে। রুটে গাড়ির সিলিং (রাস্তায় চলাচল উপযোগী) সংখ্যা ২৬২টির। যার মধ্যে রুট পারমিট আছে ২২৬টির। তবে টেম্পুগুলো চকবাজার থেকে শুরু করে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত যাতায়াত করে। অক্সিজেন-মুরাদপুর-চকবাজার পর্যন্ত আলাদা টেম্পু চলাচল করে। এতে যাত্রীদেরকে কয়েক দফা ভাড়া গুনতে হয়। ভোগান্তি হয় দ্বিগুণ। ৭নং টেম্পু রুটটি বহদ্দারহাট-নতুন চান্দগাঁও থানা-রাহাত্তারপুল-কালামিয়া বাজার-রাজাখালী হয়ে শাহ আমানত সেতুর ২০০ গজ আগ পর্যন্ত। এখানে নির্ধারিত সিলিং হচ্ছে ১৭০টি টেম্পুর। যার মধ্যে রুট পারমিট হয়েছে ৯৫টির। কিন্তু এ রুটে টেম্পু চলে ৫শ’র এর অধিক। রুট পারমিটের বাইরের গাড়িগুলো চলছে চাঁদার বিনিময়ে। যার মধ্যে রয়েছে মাহিন্দ্রা ও ম্যাক্সিমা।
রুট পারমিট ছাড়া টেম্পুগুলোকে লাইনভুক্তির জন্য এককালীন ৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হয়। দৈনিক লাইন খরচ দিতে হয় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাকলিয়া শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) হতে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি মাহিন্দ্রা-ম্যাক্সিমা কোম্পানির অটোটেম্পু চলাচল করে। এ লাইনে সংযুক্ত করতে প্রতি গাড়ি থেকে ৮ হাজার টাকা আদায় করে বহদ্দারহাট অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন। একই সাথে নতুন ব্রিজ, রাহাত্তারপুল এবং বহদ্দারহাট এলাকায় প্রতিটি টেম্পুকে দৈনিক ওয়েবিল প্রদান করতে হয়। এসব এলাকায় টাকা তোলার জন্য একজন করে লাইনম্যান আছে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেন বহদ্দারহাট অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তবে এ অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান তিনি।
এ রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, তিন চাকার এ পরিবহন চালনায় দক্ষ চালকের বেশ অভাব রয়েছে। বেশ কিছু চালকের লাইসেন্সও নেই। আবার কিছু কিছু চালক অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করেন। যার ফলে প্রতিদিন দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।
মো. নজরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ট্রাফিক পুলিশের উচিত এসব চালককে আইনের আওতায় আনা। কারণ একজন চালক অনেকের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এ নিয়ে বহদ্দারহাট অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, কিছু চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই সেটি অস্বীকার করবো না। আর যারা অধিক যাত্রী পরিবহন করে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা হচ্ছে।
বিআরটিএ চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, অভিযানে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারী কোনো গাড়িকে ছাড় দিচ্ছি না। বিশেষ করে গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (শহর ও যানবাহন) শ্যামল কুমার নাথ দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় যানজট নিরসনে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। সঙ্গে সঙ্গে মামলা ও গাড়ি জব্দ করার মত কঠোর শাস্তি প্রদান করছি।