টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট- ১৬ টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমাজের সকলের অংশগ্রহণ জরুরি

332

বিশ্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদ ও সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ম, বর্ণ, ধনী, গরীব নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে এই অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঝুঁকি বেড়েই চলেছে এবং পারিবারিক, সামাজিক, স্থানীয় ও রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিনষ্ট হচ্ছে বা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ থেকে প্রকাশিত এসডিজি’র মূল ডকুমেন্টে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টকে মোট পাঁচটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জনগণ, ধরিত্রী, সমৃদ্ধি, শান্তি এবং অংশীদারিত্ব। এসডিজি সবগুলো অভীষ্ট অর্জন এ পাঁচটি মূল অভীষ্টের উপর র্নিভর করে। শান্তি এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
উগ্রবাদ ও সহিংসতার মাধ্যমে যে সব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে ও সম্পদের ক্ষতি সাধন করে তারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির শত্রæ। এই উগ্রবাদ ও সহিংসতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক ভয়াবহ ব্যাধি। লোভ, হিংসা, অহংকার, বিদ্বেষ, ক্রোধ, ঘৃণা এবং ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ইত্যাদি হতেই উগ্রবাদ ও সহিংসতার উৎপত্তি। প্রতিটি ধর্মে শান্তির কথা বলা হয়েছে, তাছাড়া অন্যায়ভাবে সম্পদের ক্ষতি, মানুষ হত্যা এবং সমাজ বিরোধী কাজকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) বলেছেন, ‘যারা ফিতনা-ফ্যাসাদ করে আল্লাহ্ তাদেরকে কোনো সময়ই পছন্দ করেন না। প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মানুষ নিরাপদে থাকবে’। পবিত্র হাদিস শরীফে বলা আছে ‘হিংসা, নেকি ও পুণ্যসমূহকে ছারখার করে দেয়; অগ্নি যেমন কাঠ ও লাকড়ি পুড়িয়ে ছাইভস্ম করে দেয়’। শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন ‘যে ব্যক্তি অন্যের সুখে সুখী ও ব্যথায় ব্যথিত হয়, সেই জগতের সর্বোত্তম ব্যক্তি’। মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন ‘অহিংসা পরম ধর্ম’। যতবার যিশু খৃষ্ট তাঁর শিষ্যদের কাছে দেখা দিয়েছেন ততবার তিনি বলেছেন-‘তোমাদের শান্তি হোক’। যারা বিভিন্ন পন্থায় ও প্রলোভনে মানুষকে বিশেষ করে তরুনদের উগ্রবাদ ও সহিংসতার পথে আহবান করছে এবং যারা এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে, তাদের কাজ কখনো গ্রহণযোগ্য নয় এবং তারা কোনদিনই সফল হবে না। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ তাদের কখনো সফল হতে দিবে না। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই শান্তিপ্রিয়। সমাজে অশান্তি, সহিংসতা আমাদের কারোরই প্রত্যাশিত নয়। তবুও মাঝে মাঝে কিছু সুযোগসন্ধানী, স্বার্থান্বেষী মানুষ সামাজিক শান্তি, সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আর বারে বারে শান্তিপ্রিয় মানুষেরা এই সব অপচেষ্টা কৃতিত্বের সাথে রুখে দিয়েছে। দল-মত, শ্রেণী-পেশার উর্ধে উঠে বাংলাদেশের মানুষ সহিংসতা প্রতিরোধ করেছে, সমাজে শান্তির বাতাবরণ বিনষ্ট হতে দেননি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগত ভাবে সামাজিক সম্প্রীতির মূল্যবোধ ধারণ করে যা বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বড় ভিত্তি।
আমাদের পবিত্র সংবিধানে সমিতি, সংঘ গঠন করার জন্য সবার অধিকার থাকলেও ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য তৎপরতা চালানোর অধিকার কারোরই থাকার কথা নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই যে, আমরা আমাদের পবিত্র সংবিধানের এই প্রত্যাশা পূরণে খুব বেশি এগুতে পারিনি। ফলে এখনো শান্তিপ্রিয় নাগরিক হিসেবে আমরা সহিংস রাজনৈতিক কার্যক্রমে ভয়ে আছি।
বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক ইস্যুতে আমরা দেশে সহিংসতা ঘটতে এবং সহিংসতার পূর্বাভাষ দেখেছি। এ সহিংসতা ধর্মকে ব্যবহার করে, সাপ্রদায়িকতাকে উষ্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে তা’ সবার কাছেই দিবালোকের মতই প্রকাশ্য। এ দেশের মানুষ বরাবরই শান্তির সপক্ষে। সমাজে কোন সহিংস ঘটনা ঘটুক তা’ এ দেশের সাধারণ মানুষ কখনও প্রত্যাশা করে না। কারণ, এ দেশের মানুষ নানান সময়ে সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন। এ সব সহিংসতায় অনেকেই তাদের সন্তান, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন। তাদের সহায়-সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। কেউ কেউ এ সহিংসতার জন্য মাসের পর মাস নিজের বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর দিন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা দেশের অধিকাংশ মানুষের মতোই এ অবস্থার অবসান চাই।
বাংলাদেশ বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু সম্প্রদায়ের স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছি। প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা হয়ে থাকে। যেটা হওয়া কখনও উচিত নয়। আমরা সবাই শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে চাই যেটি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য এবং আবহমান বাংলাদেশী মূল্যবোধ। নির্বাচনে যে যার মতো ভোট দিতে পারে, ভোট যার- সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তার কিংবা যে যার পছন্দমতো রাজনৈতিক আদর্শের সমর্থক বা অনুসারী হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এটিকে নিয়ে কোনো উগ্রবাদ ও সহিংসতা কেউ কখনও সমর্থন করে না এবং করবেও না। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা নিজ ধর্মকে যেমন সম্মান করি অন্য ধর্মের প্রতি তেমনি শ্রদ্ধাশীল। বর্তমান সময়ে উগ্রবাদ ও সহিংসতা একটি ক্রমবর্ধমান চিন্তার বিষয় যা ছড়িয়ে গেলে সর্বসাধারণের নিরাপত্তা, জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এমনকি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের এগিয়ে চলার পথ কঠিন হবে। দেশের প্রতিটি সচেতন জনগণ বিশ্বাস করে যে সামাজিক সম্প্রীতি এবং সহনশীলতার আবহমান বাংলাদেশী মূল্যবোধ হচ্ছে অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় ভিত্তি। গোটা জাতি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত সহিংসতার চক্রে পড়ে কুঁকড়ে ছিল। মানুষ নিশ্চয়তা পেতে চাইছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা তাদের সমর্থক এবং সংগঠনসমূহ যাতে অহিংস হয় এবং আইনের শাসন মেনে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। আমরা মনে করি, একমাত্র শুভবুদ্ধি সম্পন্ন রাজনৈতিক শক্তিই পারে এই অশুভ’র হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিতে। আমরা যে কোনো উগ্রবাদ ও সহিংসতার ঘটনা আর দেখতে চাই না। এ ধরনের উগ্রবাদ ও সহিংতার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, সাউথ সুদান এবং ভেনিজুয়েলা সাম্প্রতিক সময়ে উগ্রবাদ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে যেগুলোকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আবহ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, আসলে একটি গোষ্ঠীর মতবাদ প্রতিষ্ঠা বা মত জানান দেওয়ার জন্য করা হয়েছে বা হচ্ছে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা এ শতাব্দির সকল নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। এ নিষ্ঠুরতার পিছনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার পাশাপাশি উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর অবদানই খুব বেশী। অতি সম্প্রতি আইএস ইরাকে প্রকাশ্যে শোডাউন করে তাদের সরব উপস্থিতি আবার নতুনভাবে জানান দিচ্ছে বিশ্ববাসীকে।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের কৌশল নির্ধারণ এবং উগ্রবাদ বিরোধী ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ মাসেই (৯-১০ ডিসেম্বর,২০১৯) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯। বাংলাদেশ পুলিশে’র কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসি ইউনিট অনুষ্ঠানটির মূল আয়োজক হিসেবে ছিলেন। দেশে শান্তি, শৃংখলা ও সহ-অবস্থান চলমান এবং আরও বেশী উন্নত করতে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি এ বিষয়ে আরও বেশী জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞগণ মতামত প্রদান করেছেন। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো অনেক এজেন্ডা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। পাশপাশি এসডিজি’র গোল নম্বর ১৬ এর মূল বিষয় “শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন” অর্জনে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে আরও বেশী সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। সরকারি উদ্যোগসমূহহে জনসম্পৃক্ততা আরও বেশী বাড়ানো প্রয়োজন এবং যেটি সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে।
তরুণরা যারা উগ্রবাদ ও সহিংসতার সাথে জড়িত তারা সংখ্যায় অত্যন্ত নগণ্য বললেই চলে। বাস্তবে বেশীরভাগ তরুণই ভাল কাজে তাদের সময় এবং শক্তি খরচ করতে আগ্রহী। দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে, শান্তির পক্ষে কিংবা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বেশীর ভাগ তরুণই অবদান রাখছে এবং রাখতে আগ্রহী। দেশকে তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরার জন্য তরুণদের অবদানই বেশী। তরুণদের এই উন্নয়ন অংশীদারীত্ব দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বিশ্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের শান্তি বিনষ্টকারী বিষয় বিশেষ করে উগ্রবাদ ও সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন ধর্ম বর্ন, ধনী, গরীব, নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে এই অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশে সহিংসতা ও অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী, শিশু, যুব সম্প্রদায় এমনকি বিভিন্ন সংখ্যলঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ জনগোষ্ঠী। জাতীয়ভাবে এই অপরাধপ্রবণতা কমানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিলেও তা প্রতিরোধে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেনা। এমনকি সরকারীভাবে নারী, শিশু নির্যাতন বিরোধী নীতিমালা উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও এসব বিবেচনায় ভ‚ক্তভোগী জনগোষ্ঠীর কাছে এর ফল আশানুরূপভাবে পৌঁছায় না। ফলে সাধারন জনগন উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে কক্সবাজার জেলার রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায় উগ্রপন্থী গ্রæপ দ্বারা আক্রান্ত হলে এ অঞ্চলের উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের অনেকগুলো জেলা সমুদ্র উপকূলবর্তী ও সীমান্তবর্তী। উপকূল ও সীমান্তবর্তী এলাকার কারণে অবৈধ পথে চোরাচালান ও মানব পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অনিবন্ধিত বিভিন্ন লোকজনের কারণে সহিংসতা ও অনৈতিক কার্যকলাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। সামাজিকভাবে স্থানীয় ও রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। দেশ নিয়ে যারা ভাবেন, দেশের উন্নয়নে যারা আনন্দিত হন-গর্ববোধ করেন, দেশের দুঃসময়ে যারা এগিয়ে আসেন সবসময়, সেই সব সম্মানিত নাগরিক সমাজ ও নাগরিক সংগঠনসমূহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চলমান রাখতে এবং এ উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখছেন এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন।
ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ আমাদের সবার। একটি গোষ্ঠীর সংকীর্ণ স্বার্থের কারণে আমরা অপার ও পরিপূর্ণ সম্ভাবনার আমাদের প্রিয় দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে নষ্ট হতে দিতে পারি না। আসুন আমরা জেগে উঠি ও ঐক্যবদ্ধ হই। সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় সচেতন মানুষের ঐক্য আজ খুব বেশী প্রয়োজন। এ দেশ সামাজিক সম্প্রীতি এবং সহনশীলতার আবহমান বাংলাদেশী মূল্যবোধ হিসেবে বিশ্ববাসীসহ তরুণ প্রজম্মের কাছে পরিচিতি লাভ করুক-আসুন আমরা সকলে মিলে সেই চেষ্টা করি। গুলশানের হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া, আতিয়া ম্যানশন, নাসির নগরের ঘটনা কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে ভোলার ঘটনার মতো আর কোন ঘটনায় আমাদের প্রিয় দেশে ঘটবে না বা ঘটতে দেওয়া হবে না। যার বিরুদ্ধে বর্তমানের মতো সবসময় পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বেহেস্তে যাওয়ার নাম করে কিংবা ধর্মের ও জিহাদের ভুল ব্যাখা দিয়ে এ ধরনের ভুল কার্যক্রমে কেউ আর সম্পৃক্ত হবে না। কারণ অভিভাবক তাদের মৃত লাশ গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানায়, পরিচয় দিতে অসম্মান এবং অপরাধ বোধ করে এবং এরকম হওয়াটাই কাম্য ও স্বাভাবিক। শান্তি ও সম্প্রীতির হাওয়ায় সকল তরুণ আবগাহন করুক-সবসময় ভালো থাকুক আমাদের তারুণ্য এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানগণ ১৯৭১ সালে আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। তাঁদের যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার থেকেই আসুন আমরা আজ শপথ উচ্চারণ করি যে কোন মূল্যে আমরা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিষবাষ্প থেকে মুক্ত রাখব। আসুন টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করি, সন্তানকে সুশিক্ষা দিই ও খোঁজ খবর রাখি, নারীদের সম্মান করতে শিখি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার করি এবং সমাজ ও রাষ্ট্র রিরোধী কাজ থেকে নিজে বিরত থাকি এবং অন্যকে বিরত থাকতে সহায়তা করুন।
(প্রবন্ধটি এসডিজি ইয়ূথ ফোরাম’এর দুই দিনব্যাপী শান্তি বিষয়ক সেমিনার ও ওয়ার্কসপ-এ কী নোট হিসাবে উপস্থাপন হবে)।
লেখক : সহকারি পরিচালক, ইপসা, চট্টগ্রাম।