টেকনাফে ‘ভয়ঙ্কর মাদক’ আইসের বড় চালান জব্দ

17

নতুন ধরনের মাদক ক্রিস্টাল মেথের বড় একটি চালান কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের পাশের এলাকা থেকে আটকের খবর জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখানে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ আটক করা হয় বলে বৃহস্পতিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়। এ ঘটনায় মো. আব্দুল্লাহ নামে একজনকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আব্দুল্লাহ গোলাম নবীর ছেলে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর টেকনাফ বিশেষ জোনের সদস্যরা টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকের এ চালান আটক করে। এসময় আব্দুর রহমান নামে আরও একজন পালিয়ে যান। শতভাগ এমফিটামিন যুক্ত ক্রিস্টাল মেথ মাদকসেবীদের কাছে আইস নামে পরিচিত।
এর দুই কেজির দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই মাদকের ব্যবহারকারীরা অত্যন্ত ধনী শ্রেণির।
বাংলাদেশে এটাই আইসের সবচেয়ে বড় চালান আটকের ঘটনা বলে জানিয়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এর আগে গত বছর জুন মাসে অধিদপ্তর প্রায় ৫০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে।
টেকনাফ উপজেলার ২৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন জাদিমুড়া এলাকায় বুধবারের অভিযানেও প্রায় দুই কেজি আইসের সঙ্গে আবদুল্লাহ (৩১) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত দুই বছর ধরে আইস বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে বলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান। তারা বলছেন, আইস থাইল্যান্ডে বেশি ব্যবহার হয়। ইয়াবার মতো এই মাদকটিও মিয়ানমার হয়ে আসতে শুরু করেছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জব্বার বলেন, এবারের চালানটি ধরতে প্রায় ছয় মাস গোপন অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিলেন তারা।
তিনি বলেন, এই চালানটি থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসে। তবে এরপর কোথায় নেওয়া হত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশে এখনও এই মাদকের কোনো ব্যবহারকারীর সন্ধান অধিদপ্তর পায়নি বলে জানান তিনি।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এটি একটি সিনথেটিক স্টিমুলেটিং জাতীয় মাদক। পশ্চিমা বিশ্ব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এই মাদকের ব্যবহার বেশি।
আইসকে ভয়ঙ্কর মাদক হিসেবে চিহ্নিত করছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ইয়াবার সঙ্গে তুলনা করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খুরশীদ আলম এর আগে বরেছিলেন, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ, আর আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। ফলে এটি ইয়াবার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর এবং অনেক বেশি পরিমাণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে।
অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, মানবদেহে অতি অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এই মাদক।
এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এই মাদক সেবনের ফলে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জব্বার বলেন, তার অধীনস্ত কোনো সদস্যের বিষয়ে সন্দেহ হলে ‘ডোপ টেস্ট’ করা হয়। তাছাড়া মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর উপরও নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন করে কোনো নিরাময় কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না বলেও তিনি জানান।