টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায় বিনিয়োগ লাগে না!

54

টেকনাফের কোনও ব্যক্তির ইয়াবা ব্যবসায় জড়াতে বিনিয়োগ লাগে না। এমনকি ইয়াবার কোনও চালান ধরা পড়লে সেজন্য জরিমানাও গুণতে হয় না। বাহকের কাজ হচ্ছে বিক্রি করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা জমা দিয়ে আকর্ষণীয় কমিশন নিয়ে নেওয়া। আর এ কারণেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এত তৎপরতার মধ্যেও কমছে না ইয়াবা ব্যবসায়ের প্রতি টেকনাফের স্থানীয়দের আকর্ষণ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফের স্থানীয়রাই।
প্রক্রিয়াটির ব্যাখ্যা দিয়ে টেকনাফের একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, মিয়ানমার থেকে বিনামূল্যে ইয়াবার চালান পাঠানো হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে সেই চালান ঢুকে পৌঁছে যায় টেকনাফের নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে। এসময় বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে ইয়াবার চালান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হলে বাহককে এর মূল্য পরিশোধ করতে হয় না। যে চালান নিরাপদে ব্যক্তিবিশেষের কাছে পৌঁছাবে কেবল তারই মূল্য পরিশোধ করতে হয়। মূল্য পরিশোধও জটিল নয়। দেশেই আশেপাশের কোনও ব্যক্তির কাছে সেই দাম দিতে হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত নির্ধারিত এজেন্টরা এ টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। মিয়ানমারে সরাসরি কোনও টাকা বা অর্থ পাঠাতে হয় না। টেকনাফ, কক্সবাজার শহর, চট্টগ্রাম এবং ঢাকাকেন্দ্রিক এসব ব্যবসায়ী বৈধ ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার অর্থ সংগ্রহ করে দুবাই-সিঙ্গাপুর পাচার করে থাকে। এভাবেই ডালপালা ছড়াচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা।
তারা বলছেন, টেকনাফে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করলেও মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছে চোখের আড়ালেই। এদের ধরতে না পারলে ইয়াবা সাম্রাজ্যের পতন ঘটানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে প্রথমবারের মতো আত্মসমর্পণ করলেন মাদক কারবারিদের একটি অংশ। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা ও ৩০টি পিস্তলসহ আত্মসমর্পণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে। এর মধ্যে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৫৭ জন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এখনও আড়ালে থেকে যাচ্ছে ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা কয়েকজন ইয়াবা কারবারির বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, ‘ইয়াবা পাচার, অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে অনেক বড় বড় গডফাদার রয়েছে। মূলত এরাই ইয়াবা পাচারের নেপথ্যে কাজ করছে। আত্মসমর্পণকারীরা জানায়, তাদের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি বলা হলেও নেপথ্যে একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। যে চক্রের সদস্যদের কারও নাম এখনও প্রশাসন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনও তালিকায় আসেনি। তারা নেপথ্যে অবস্থান করে এদের (আত্মসমর্পণকারী) দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।’
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণে আসা ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে এমন ৩০ জন এজেন্টের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর এ টাকা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করা হয় দুবাই ও সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ইয়াবার মূল মালিকদের কাছে। আর দুবাই সিঙ্গাপুর ঘুরে এ অর্থ পৌঁছানো হয় মিয়ানমারে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মনে করছেন, ইয়াবা গডফাদারদের নেপথ্যে রয়েছে টাকা সংগ্রহকারী হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। আর এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীর নেপথ্যের ব্যক্তিরা রয়েছে দুবাই এবং সিঙ্গাপুরে। ইতোমধ্যে দুবাই এবং সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া থেকেও কিছু ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করতে দেশে ফিরেছেন। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নেপথ্যের ব্যক্তিদের শনাক্ত করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছে।’