টুকটুকি ও টিকটিকি

171

ডানপিটে বন্ধুরা, আজ তোমাদেরকে মজার এবং খুব চমৎকার এক গল্পের বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। গল্পের বইয়ের নাম ‘টুকটুকি ও টিকটিকি’। কী, সত্যি খুব মজার নাম, তাই না! গল্প বইটির লেখক কে জানো! তিনি হলেন, তোমাদের আমাদের সকলের অত্যন্ত প্রিয় লেখক শিশুসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক এমরান চৌধুরী। তিনি বেশিরভাগ সময়ই ছোটদের জন্য ছড়া কবিতা গল্প ইত্যাদি লিখে থাকেন। আর তাঁর লেখাগুলো আমাদের তোমাদের মনের মতো করে উপস্থাপন করতে পারদর্শী তিনি নিঃসন্দেহে। চলো, আলোচ্য গল্প বইয়ের গল্পগুলো কোনটা কেমন তা আমরা দেখে নিই এবার।
‘বিশালে ভাবনা’ এই বইয়ের প্রথম গল্প। দাদুর সাথে বিশালের বেশ ভাব। দাদু’র ডায়াবেটিস। বিশাল প্রতিদিনই নিয়ম করে দাদুর সাথে ডিসি হিলে হাঁটতে যায়। দাদু’র সাথে হাঁটতে হাঁটতে বিশাল নানা প্রশ্ন করে দাদুকে। দাদুও বিশালের প্রতিটা প্রশ্নের সদোত্তর দেন। সদ্য ক্লাস ফোরে ওঠা বয়সের বিশালের প্রশ্ন করার যে ঝোঁক, তা কিন্তু চমৎকার একটা দিক, তার মতো ছোট বয়সের শিশুদের জন্য। শিশুদের মনে, জানতে চাওয়া, প্রশ্ন করা খুবই শুভ লক্ষণই বটে। বিশালের দাদুও তাই বিশালের প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দেন যথাযথভাবে। বিশালের ছোট্ট মনে মানবিকবোধের পরিচয়ও ষ্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন আমরা দেখি,
‘ওরা কারা দাদু ?
ওরা মানে?
ওই যে রাস্তার পাশে বারান্দায় যারা ঘুমায়!
কেন? কিছু মানুষ ঘুমায়!
তাতো দেখছি দাদু। কিন্তু ওরা ওখানে ঘুমায় কেন?
ওদের থাকার জায়গা নেই, বাসাবাড়ি নেই, তাই।
দাদুর কথা বিশাল বুঝে উঠতে পারল না। এ শহরে এতগুলো বিল্ডিং, দশ তলা, বারো তলা। তবু ওদের থাকার জায়গা নেই। ব্যাপারটা বিশালকে বেশ ভাবিয়ে তুলল।’ এখানে গল্পের লেখক এমরান চৌধুরী অসহায় মানুষের জন্য বিশালের ছোট্ট মনের পবিত্র মানবিকবোধ-চিন্তাকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
শুধু কি তাই! এই গল্প বইয়ের দ্বিতীয় গল্প ‘অন্য রকম উপহার’ গল্পে ছোটনের মহর্ত্বের বিশেষত্বও কম না। ঈদে ছোটনের বড় আন্টির দেয়া সবচেয়ে সুন্দর জামাটা জাকাতের জন্য আসা তারই বয়সের ছেলেটাকে দিয়ে দিলো। তার ঈদে জামা কেনা হয়নি বলে। সে জন্য ছোটনের মা রেগে গেলেও ছোটনের বাবা কিন্তু তার ছেলের কাজের জন্য প্রশংসাই করলেন। তাইতো ছোটনের বাবা তার মাকে বুঝিয়ে বলেন, “একটুখানি ভাবলে বুঝতে পারবে আমাদের ছোটন একটি অসাধারণ কাজ করেছে। এমন ছেলেইতো আমাদের দরকার, যে নিজের প্রিয় জিনিসটা হাসিমুখে অন্যকে দিতে পারে।”
‘তুড়ুৎ’ এই গল্প বইয়ের এর তৃতীয় গল্প। গল্পকার এমরান চৌধুরী এই গল্পেও পূর্ববর্তী গল্পগুলোর মতো দারুন শিক্ষণীয় বিষয় সংযোজন করে গল্পকে করে তুলেছেন প্রাণময়, বাস্তবধর্মী। ছোট্ট নাবিহা তার বন্ধু চড়ুই ধান আর শালিকের কাছে জানতে পারে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে ব্রাশ করা, মুখ ধোয়া, ব্রেকফাস্ট করা ইত্যাদি’র কথা।
ডানপিটে বন্ধুরা, এখানেই শেষ নয়। আসি এবার পরবর্তী “কয়েন ক্লাব” গল্পের কথায়। আকাশের ছোটমামা তার বার্ডডেতে তাকে মাটির ব্যাংক উপহার দিয়ে তাকেসহ তার বন্ধুদের নিয়ে “কয়েন ক্লাব” করার পরামর্শ দেন। বললেন, “কয়েন ক্লাবের যারা সদস্য হবে তাদের প্রধান কাজ হবে নিজেরা কয়েন জমানো এবং অন্যদের কয়েন জমাতে উৎসাহিত করা। এক টাকা, দু’টাকা, পাঁচ টাকার কয়েন। ছোটো মামা শ্লোগান ধরল,
-এসো সবাই জমাই টাকা
বছর শেষে ঘুরবে চাকা।”
সত্যি দারুণ! কী বলো বন্ধুরা! তোমরাও আমার সাথে একমত হবে জানি। আকাশকে তার বার্ডডে অনুষ্টানে ছোটমামার উপহার দেয়া মাটির ব্যাংকে কয়েন জমানো জন্য বিষয়টা সত্যি খুবই মজার, তাই না বন্ধুরা! এতে করে আস্তে আস্তে বাস্তব সম্মতভাবে ছোটদের সঞ্চয়ের অভ্যাসও গড়ে ওঠার দিক নির্দেশনা রয়েছে।
ছোট বন্ধুরা, ‘টাকার গাছ’ গল্পটাই দেখো না। সেটাও কিন্তু চমৎকার শিক্ষণীয় একটা গল্প। সহজ এবং সরল কথা-কাহিনীর সন্নিবেশে এই গল্পের এগিয়ে চলা। নিষ্টা, পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকলে সব কিছুতেই সাফল্যলাভ করা যায়। কত সুন্দরভাবে গল্পকার কোটিপতি বনে যাওয়ার পথ বাতলে দিলেন!
‘ছোটন ও কাক’ গল্পটার কথাই ধরা যাক না! অসাধারণ ভালো একটা গল্পের বিষয়। সচেতনা বৃদ্ধির সহায়ক এই গল্পের মূল কাহিনী। প্রত্যেকেরই উচিত ছোটনের মতো সচেতন হওয়া, যা ওর মায়ের শিখিয়ে দেয়া অনুযায়ী সে করতে বাধ্য এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
“আমরা পতাকা উড়াব। আনন্দ করব। হইচই করব। প্রিয় দলের জয়ে ফুর্তি করব। তবে সব হবে সীমার মধ্যে। সীমা ছাড়িয়ে নয়। পতাকার বেলায়ও ঠিক তাই। আগে দেশের পতাকা। তারপর অন্য দেশের। তাছাড়া দেশের পতাকা থাকতে হবে অন্য দেশের চেয়ে উঁচুতে।” ছোট্ট বন্ধুরা, অতীব সত্য কথন গল্পকার এমরান চৌধুরী এমন করে গল্পচ্ছলে আমাদের সকলকে সচেতন করে দিলেন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সকলের তা অবশ্যই মনে রাখা উচিত।
আলোচ্য গল্প বইয়ের শিরোনাম গল্প ‘টুকটুকি ও টিকটিকি’ শিশুমনের সারল্যের দুরন্ত সৌন্দর্য্যরে চিত্র ফুটে উঠেছে দারুনভাবে। গল্পকার এমরান চৌধুরী এই গল্প বইয়ের মোট আটটি গল্পের প্রত্যেকটা গল্পেই, শিক্ষনীয় বিষয়, মানবিকতা, মূল্যবোধ, সচেতনা, নানা সত্যকথন ইত্যাদি তুলে ধরেছেন খুবই সফলতার সাথে। গল্পকার তোমাদের জন্য এই বইয়ের প্রত্যেকটা গল্প অত্যন্ত যতœসহকারে সহজ সাবলীল ভাষায় নানান তথ্যসহকারে উপস্থাপন করেছেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ছোটবন্ধুরা, তোমরা এই গল্পের বইটি যারা এখনো পড়োনি, তোমাদেরকে দেরি না করে অতি সত্ত¡র পড়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করবো। দেখবে সত্যি ভালো লাগবে তোমাদেরও। প্রত্যেকটা গল্পের সাথে রঙিন রঙিন সব চিত্র দেখে তোমরাও মুগ্ধ হবে ঠিকই। এই চিত্র কে এঁকেছে জানো? খ্যাতিমান আঁকিয়ে শিল্পী ফারজান পায়েল। হ্যাঁ, সাথে গল্পের বইয়ের চমৎকার প্রচ্ছদটিও এঁকেছেন তিনি। সর্বমোট চল্লিশ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ চাররঙা ছাপা গল্পের এই বইটির মূল্য মাত্র একশত আশি টাকা। শব্দশিল্প থেকে প্রকাশিত এই গল্পের বই আমার মতো তোমাদের কাছেও সত্যি অন্যান্য শ্রেষ্ঠ গল্প বইয়ের মতো মনে হবে। যারা এখনো তোমরা শিশুসাহিত্যিক এমরান চৌধুরীর “টুকটুকি ও টিকটিকি” এই গল্পের বইটি পড়োনি, তারা সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারো, তোমাদের অবশ্যই ভালো লাগবে প্রতিটা গল্প এবং উপকৃত হবে এ কথা আমি হলফ করে বলতে পারি।