টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

18

মনিরুল ইসলাম মুন্না

রিয়াজউদ্দিন বাজারের একটি দোকানের কর্মচারী সাখাওয়াত হোসেন সুমন জামালখান এলাকায় টিসিবি’র পণ্য কেনার জন্য সকাল ১০টায় লাইনে দাঁড়ান। তবে গাড়ি এসে পণ্য বিক্রি শুরু করতে ১১টা বেজে যায়। তিনি সাড়ে ১১টার মধ্যে পণ্য নিতে পেরেছেন। বৃষ্টির মধ্যে পণ্য নিতে পেরে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাক না আসায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্য টিসিবি’র ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো যদি আমি দোকান থেকে কিনি তাহলে অতিরিক্ত ১৬০ টাকা বেশি লাগবে। এখন লাইনে দাঁড়িয়ে নেয়াতে আমার ১৬০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। অর্থাৎ ৪২০ টাকা দিয়ে ২ কেজি করে চিনি, ডাল ও তেল নিতে পেরেছি। আর যেসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, তাও নামিদামি ব্র্যান্ডের। যথাসময়ে ট্রাক না আসলেও সাশ্রয়ী পণ্য পাচ্ছি সেটাই অনেক ভাল।’
বাজারে চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেলের দাম বেশ চড়া। চিনি এখন কেজিপ্রতি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, সুতরাং ট্রাক থেকে কিনলে সাশ্রয় হচ্ছে কেজিতে ১৫ টাকা। মোটা মশুর ডাল টিসিবি’র ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। বাজারে এ ডাল কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রাক থেকে কিনলে সাশ্রয় কেজিতে ২০ টাকা। বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি’র ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতি লিটারে ৪৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
এদিকে তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতেও নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে, যা আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকগুলোর সামনে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও ট্রাক নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে পণ্য বিক্রি শুরু করতে ১১টা বেজেছে।
জামালখান, কোতোয়ালি ও ষোলশহর ২নং গেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
টিসিবি কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীর ৮টি পয়েন্টে বিক্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব পয়েন্ট হচ্ছে- জামালখান, কোতোয়ালী, বহদ্দারহাট, স্টিলমিল বাজার, ইপিজেড থানা টিসিবি অফিসের সামনে, আগ্রাবাদ, সার্কিট হাউস এবং ষোলশহর ২নং গেট এলাকা।
এ বিষয়ে টিসিবি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, চলমান লকডাউনের কারণে ট্রাক সেল কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এভাবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রাক বাড়িয়ে দেয়া যাবে।
বিকেলে দেখা গেছে, জামালখান প্রেসক্লাব এলাকায় বৃষ্টির মধ্যেও লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। করোনা মহামারিকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার গরজ নেই কারো। গাদাগাদি করে লাইনে পণ্য নিচ্ছেন ক্রেতারা।
টিসিবি’র পণ্য বিক্রেতা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, সকাল ৯টার দিকে গুদাম থেকে পণ্য নিয়ে সকাল ১০টায় কোতোয়ালি এলাকায় এসে দেখি দীর্ঘ লাইন। যা পণ্য নিয়ে আসি, তার মধ্যে প্রতিজনকে ২ কেজি করে দিয়ে দিই। দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি এবং দুই লিটার তেল দিচ্ছি। তিনি আরও জানান, পণ্য দিতে না পারার কারণে মাঝে মাঝে ভোক্তারা আমাদের উপর চরম ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তো পণ্য রেখে দিচ্ছি না।
এদিকে টিসিবি’র ট্রাকে চিনি বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা কেজি এবং সয়াবিন তেল লিটার বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। আর এসব পণ্য আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বিক্রি হবে বলে জানা যায়।
বর্তমানে টিসিবি বাজারের প্রচলিত ব্র্যান্ডের এস.আলম সয়াবিন তেল, তীর চিনি ও তীর ডাল বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।টিসিবি’র চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ আরও জানান, ‘বর্তমানে পণ্য কিনতে মানুষ যাতে সমাগম করে সংগ্রহ না করে সে জন্য তিন ফুট দূরত্বে বৃত্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা করছে। এছাড়াও পরিবেশকদের বলে দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন ক্রেতাদের লাইনে দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করে। এছাড়া আমরা প্রতি ট্রাকে ৪০০ কেজি সয়াবিন তেল, ৬০০ কেজি চিনি এবং ৫৫০ কেজি ডাল প্রদান করছি। কেউ খালি হাতে ফিরবেন না আশা করি। লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ পণ্য না নিয়ে যাচ্ছেন না।’