টিনুর গ্রেপ্তারে চকবাজার এলাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস

69

কোথাও ভবন তৈরি হচ্ছে হাজির হতেন তিনি। টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি দখল করে দিতেন তিনি। কোচিং সেন্টার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান- এমনকি ফুটপাতের দোকান থেকেও নিয়মিত চাঁদা তুলতেন কথিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনু। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব জিঁইয়ে রেখে নিজের আধিপত্যও বিস্তার করতেন এই টিনু।
গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে শুলকবহর এলাকার বাসা থেকে জসিম উদ্দিন নামের এক সহযোগীসহ টিনু র‌্যাবের হাতে আটক হন। আটকের পর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ শর্টগান, বিদেশি পিস্তল ও ৭২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
সূত্র জানায়, কলেজে না পড়েও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া টিনু চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। টিনুর বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম জামায়াতের রুকন পর্যায়ের একজন নেতা। ছোট ভাই নুরুল আলম শিপু চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি। ফলে বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ যারাই ক্ষমতাই আসুক না কেন, এ তিনজন সব সময় নিরাপদ থাকতেন। অবস্থা এমনই বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তার বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম ও নুরুল আলম শিপু টিনুকে নিরাপদে রাখতেন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে টিনু অন্য দুইভাইকে রক্ষা করতেন। তার ভাই জামায়াত নেতা সেলিম নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হলে, তাকে ছাড়াতে পাঁচলাইশ থানা ঘেরাও করে আলোচনায় এসেছিলেন টিনু। তার বিরুদ্ধে নগরের পাঁচলাইশ ও চকবাজার এলাকায় জমি দখল, ছিনতাই ও নিয়মিত চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। খবর বাংলানিউজের
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক স্বরূপ ভট্টাচার্যের ওপর হামলা চালায় টিনুর অনুসারীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কায়সার হামিদ টিনু গ্রূপের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, নগরের পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার কিছু পুলিশ কর্মকর্তাও নিয়মিত টিনুর বাসায় আসা-যাওয়া করতেন এবং তার কাছ থেকে মাসোহারা নিতেন। এজন্য এতোদিন তিনি পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের দিকে গোলপাহাড় মোড় থেকে একটি অত্যাধুনিক চাইনিজ একে-২২ রাইফেল, ১টি ম্যাগাজিনসহ টিনুকে গ্রেপ্তার করেছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া ২০১২ সালে চান্দগাঁও থানায় তার
বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রূয়ারি কাতালগঞ্জে এক ব্যবসায়ীর ৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় পাঁচলাইশ থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন টিনুর ছোট ভাই শিপু। আদালতে শিপু টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন। শিপুর মুক্তির দাবিতে তখন টিনুর লোকজন থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন। ওই বছরের ১২ অক্টোবর মুরাদপুরে ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গেও টিনুর বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া চাঁদার দাবিতে কাপাসগোলা সড়কে তেলিপট্টি মোড়ে আলিফ প্লাজা-৩ এ ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় টিনু বাহিনী। আলিফ প্লাজা-২ নামের ভবনেও চাঁদা না পেয়ে হামলা চালিয়ে মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় টিনু বাহিনী। এ ঘটনায়ও টিনুকে আসামি করে মামলা করেন মার্কেটের মালিক।
এদিকে টিনুকে গ্রেপ্তারের খবরে চকবাজার ও পাঁচলাইশে খুশির আমেজ দেখা দিয়েছে। চকবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে তার অনুসারীরা এসে চাঁদা নিয়ে যেতেন। টাকা দিতে দেরি হলে টিনু সরাসরি ফোন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। তার গ্রেপ্তারের খবরে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, টিনুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ দুইটি মামলা রয়েছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ পেলে যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, টিনুর বিরুদ্ধে মারামারির একটি মামলা রয়েছে।
৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ : নুর মোস্তফা টিনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর মুখ্য হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানির জন্য ২৬ তারিখ নির্ধারণ করে টিনুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, নুর মোস্তফা টিনুকে অস্ত্র মামলায় মহানগর মুখ্য হাকিম আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের আদালতে হাজির করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে।