টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

17

রতন কুমার তুরী

দিনদিন যেনো বেড়েই চলেছে টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা গেলেও কিন্তু টিকিট কালোবাজারিদের জন্য অনেকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাচ্ছেনা। অভিযোগ রয়েছে এসমস্ত টিকিট কালোবাজারিরা টিকিটের একটি বড় অংশ নাকী তাদের দখলে রেখে দিচ্ছে ।
বাংলাদেশে বিশেষ করে রমজানের ঈদ এবং কোরবানির ঈদে লাখলাখ মানুষ শহর থেকে গ্রামে যায় তাদর আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদ পালন করতে। এসকল মানুষের বেশিরভাগই দেশের জেলা শহরগুলোতে চাকরি করে এবং এরা বছরে ২/৩ বার মাত্র ছুটিতে গ্রামে যাওয়ার সুযোগ পায়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এদেশে শহর থেকে ঈদ যাত্রা বেশিরভাগ সময়েই অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়। দেখা যায় এসময় বেশিরভাগ মানুষ রেলপথে তাদের নিজের গ্রামে যাওয়ার টিকিট পায়না। অনেকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট সংগ্রহ করে। অন্যদিকে টিকিট কাউন্টার কিংবা অনলাইনে টিকিট পাওয়া নাগেলেও রেলের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের সাথে মিলে অন্যায়ভাবে টিকিট কালোবাজারিরা ঠিকই টিকিট বাইরে নিয়ে গিয়ে চড়া দামে মানুষের কাছে বিক্রি করতে থাকে, এতে সাধারন যাত্রী সাধারণ দুর্ভোগে শিকার হলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো দায়ই থাকেনা। এই টিকিট কালোবাজারির বিষয়টা কমবেশি বহুবছর ধরে চলে আসছে। একসময় যখন অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থা ছিলোনা তখন প্রায়ই দেখা যেতো একদিকে মানুষ টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অন্য দিকে টিকিট কালোবাজারিরা লাইনে টিকিট আছে, টিকিট আছে বলে হাঁক ছেড়ে চলেছে। বর্তমানে এসব টিকিট কালোবাজারিরা টিকিট কাউন্টারের পাশে টিকিট বিক্রি না করলেও এরা সুকৌশলে সাধারণত রেল যাত্রীদের কাছে চড়াদামে টিকিট বিক্রি করেই চলেছে। এখন প্রশ্ন হলো সাধারণ যাত্রীরা যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পায়না এসব টিকিট কালোবাজারিরা এতো টিকিট পায় কোথায় ? প্রকৃতপক্ষে এসব টিকিট কালোবাজারিদের রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং কর্মচারির সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকে এবং এর বিনিময় এরা ওসব কর্মচারি এবং কর্মকর্তাদের টিকিট প্রতি একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা প্রদান করে থাকে ফলে, এসব টিকিট কালোবাজারিরা অনলাইনে হোক আর অফলাইনে হোক তাদের চাহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট পেয়ে যায়, আর যেহেতু এসব টিকিট কালোবাজারিদের দখলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট চলে যায় সেহেতু সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে টিকিটের কমতি পরে।
যেহেতু এক একটি ট্রেনে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যকই টিকিট থাকে আর ওই টিকিটের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিকিট কালোবাজারিরা নিয়ন্ত্রণ করে ফলে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে দেখা দে অসন্তোষ। টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি যুগযুগ ধরে হয়ে আসলেও এসবের হোতাদের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত খুব কমই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে টিকিট কালোবাজারিদের কাউকে কাউকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলেও কিন্তু যে সমস্ত রেল কর্মচারি এবং কর্মকর্তা এসমস্ত টিকিট কালোবাজারিদের টিকিট পাইয়ে দিচ্ছে তারা থেকে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ফলে এব্যবস্থা রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। বর্তমানে রেলের সাথে দূরপাল্লার গাড়িতেও যুক্ত হয়েছে এ ব্যবস্থা। ঈদে ব্যাপক জনসমাগম দেখে দূরপাল্লার টিকিট কাউন্টার গুলো তাদের টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয় অনৈতিকভাবে। অনেক সময় অসহায় যাত্রী সাধারণ বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের পথে ছোটেন। এমন একটি অনৈতিক ব্যবস্থা যুগযুগ ধরে ধরে টিকে থাকুক এটা আমরা কেউ প্রত্যাশা করিনা, তাই টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য অচিরেই বন্ধ করা দরকার। কোনো পরিশ্রম ছাড়া শুধুমাত্র রেলের কিছু অসাধু কর্মচারি কর্মকর্তাদের বদৌলতে এসব টিকিট কালোবাজারিরা লাখলাখ টাকা আয় করে নিচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ যাত্রী সাধারণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য হাহাকার করছে বিষয়টি খুবই অমানবিক। আমরা প্রত্যাশা করবো যথাযথ কর্তৃপক্ষ টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে খুব দ্রæত একটা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এবং প্রয়োজনবোধে এদের সাথে রেলওয়ের অসাধু কর্মচারি এবং কর্মকর্তাদেও আইনের আওতায় আনবেন। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে এখন অসংখ্য মানুষের অভিযোগ করছে এবং এর আগেও টিকিট কালোবাজারি বিষয়ে মানুষের অভিযোগ ছিলো ফলে এবিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া দরকার। এসমস্ত টিকিট কালোবাজারিদের এবং এদের মূলহোতাদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনবোধে দেশের প্রতিটি রেল স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হোক এর বাইরে দেশের প্রধান প্রধান রেল স্টেশনের দৈনিক কতোগুলো টিকিট বিক্রি হচ্ছে এবং টিকিটগুলো কাদের কাছে কীভাবে বিক্রি করছে তার একটি পুর্নাঙ্গ হিসাব দৈনিক ভিত্তিতে নেয়া হোক এবং সেই হিসেব অনুযায়ী মাঝেমধ্যে অনুসন্ধান করা হোক। তাহলেই হয়তো এসব টিকিট কালোবাজারিদের সাথে রেলওয়ে কর্মচারি-কর্মকর্তাদের কিছুটা হলেও যোগসাজশ কমবে।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক