টিকা নিতে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের

22

 

গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় স্থানীয় জেলা, থানা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস কয়েকদফায় শিক্ষার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করেছেন। সর্বশেষ এসএসসি ও এইচএসসি ২০২১ পরীক্ষার্থীদের তালিকা নেয়া হয় জরুরিভিত্তিতে। বলা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। কিন্তু খুব কম পরীক্ষার্থীদের ভাগ্যে টিকা জুটেছে। চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে বসার আগে টিকা পায়নি। টিকা না পাওয়ার কারণ, টিকার স্বল্পতা নাকি টিকা কেন্দ্রের স্বল্পতা তা স্পষ্ট না হলেও চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, টেকনিক্যাল কারণে টিকা কেন্দ্র খুব বেশি স্থাপন করা যায়নি বিধায় সব পরীক্ষার্থীকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। এখন যেহেতু করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দ্রæত ছড়াচ্ছে সেহেতু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এ মাসের মধ্যেই ১২ বছরের উপর সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হবে। বিষয়টি জেনে মনে কিছুটা স্বস্তি আসলেও গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের টিকা সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন পড়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ বেড়েই গেল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ জানুয়ারি সকাল নয়টা থেকে নগরীর তিনটি কমিউনিটি সেন্টারে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে আয়োজনের দায়িত্বে ছিল জেলা শিক্ষা বিভাগ। শুরুতে নগরীর আসকার দিঘিরপাড়ের রীমা কমিউনিটি সেন্টার, সিরাজদৌলা সড়কের হল সেভেন ইলেভেন এবং আগ্রাবাদের আবদুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারে টিকা প্রদান করা হলেও গতকাল বুধবার আগ্রাবাদের টিকা কেন্দ্র সরিয়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। সবক’টি টিকা কেন্দ্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ব্যাপক ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। মুখে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় নি অনেককে। একদিকে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রণের দ্রুত বিস্তারের ফলে সরকার যখন স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন একদিনে একেকটি কেন্দ্রে কয়েকহাজার শিক্ষার্থীকে জড়ো করে টিকা দেয়ার প্রবণতা অভিভাবক ও সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিকা নিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের ব্যাপক ভিড় ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। এর দায় অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগ ও ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। দীর্ঘ ৫ মাস ধরে টিকা দেয়ার জন্য তথ্য নিয়েও কেন টিকা দেয়া হয়নি, শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়ো করে টিকা দিতে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জেনেছি, ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অধিকাংশই টিকা পায়নি। গণটিকার মধ্যেও তাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা বলেন, মাউশি, জেলা ও থানা শিক্ষা অফিস প্রতিদিন তথ্য চাই, আমরা তথ্য দিতেই আছি। বাকিটা মাউশি বা জেলা শিক্ষা অফিসেই জানে। আমরা এক্ষেত্রে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি। টিকার নামে শুধু তথ্য চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়রানি করা, ভিড় আর জমায়েত করে শিক্ষার্থীদের টিকা মারার প্রবনতা বন্ধ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঝুঁকিমুক্ত থেকে কিভাবে টিকা মারা যায়, সেই ব্যবস্থা করাই এখন জরুরি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে তাদের মনোযোগ দিবে।